বন্ধু বানানোর আগে জেনে নিন মহানবীর ৩ নির্দেশনা 

প্রত্যেকের জীবনে বন্ধু-বান্ধব আছে। একান্ত প্রয়োজন, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি এবং যেকোনো পরামর্শের জন্য জীবনে একজন সৎ ও নির্ভরযোগ্য বন্ধুর দরকার হয়। বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই সাত-পাঁচ না ভেবেই সম্পর্ক গড়ে তুলি। তবে, বন্ধু নির্বাচনের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আমাদের কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত, সে বিষয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সুস্পষ্ট ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বন্ধুত্বের গভীর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বন্ধু নির্বাচনে সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। কারণ, একজন বন্ধুর অভ্যাস ও চালচলন অন্যজনের জীবনেও প্রভাব ফেলে।

১) বন্ধুর ধর্ম ও চালচলন প্রভাব ফেলে

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তিনি বলেন:
‘প্রত্যেক মানুষ অভ্যাসগতভাবে বন্ধুর ধর্ম ও চালচলন অবলম্বন করে। তাই কেমন লোককে বন্ধু হিসেবে গ্ৰহণ করা হচ্ছে, তা আগেই ভেবে দেখা উচিত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আপনার বন্ধুর চিন্তা-চেতনা, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আদর্শ আপনার জীবনেও সংক্রমিত হবে। অসৎ বন্ধুর প্রভাবের কারণে একজন ভালো মানুষও খারাপ অভ্যাসের শিকার হতে পারে। তাই সৎ, ধর্মপ্রাণ এবং নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

২) বন্ধুর কাজকর্মে পরকালের স্মরণ

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গীর গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। আপনার সঙ্গী বা বন্ধু কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তিনি বলেন:

‘তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সাথী সে—
১. যার সাক্ষাৎ তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
২. যার কথায় (শ্রবণে) ইলম (জ্ঞান) বৃদ্ধি পায়।
৩. যার কাজ-কর্ম তোমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।”

(ইমাম বুসিরি, ইতহাফুল খিয়ারাহ: ৮/১৬৩; হাদিসটির বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়নি, তবে অর্থের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই)
 
একজন উত্তম বন্ধু সেই ব্যক্তি, যিনি আপনাকে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী করে তুলবেন, আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করবেন এবং যিনি আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতের পথে চলতে উৎসাহিত করবেন।

৩) চিন্তা-চেতনার উপর বন্ধুর প্রভাব

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও গুরুত্বের সাথে বলেছেন, বন্ধুর চিন্তা-চেতনা একজন মানুষের উপর কতটা প্রভাব ফেলে:
‘মানুষ তার বন্ধুর চিন্তা-চেতনার উপর (প্রভাবিত হয়ে) থাকে। সুতরাং তোমাদের লক্ষ রাখা উচিত, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’ (ইমাম আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)
 
অতএব, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার দিকগুলো অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। একজন ভালো বন্ধু যেমন আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।

জীবনে সফল হতে এবং পরকালে মুক্তি পেতে হলে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। এমন বন্ধু নির্বাচন করা উচিত যারা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণে সহায়ক হবে। বন্ধু নির্বাচনের আগে তাদের ধর্ম, আদর্শ, নৈতিকতা এবং আল্লাহর প্রতি তাদের অনুগত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।