দিনভর ব্যস্ততা, কাজের চাপ আর দৌড়ঝাঁপের মাঝে বড় ইবাদত নিয়মিত করা অনেকের ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। তবে আলেম ও ইসলামি স্কলারদের মতে, কিছু সহজ আমল আছে যেগুলো খুব সামান্য সময় ও পরিশ্রমেই বিপুল সওয়াব এনে দিতে পারে। এসব ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল শুধু আখিরাতের পুঁজি নয়, বরং মানুষের মন, চরিত্র এবং দৈনন্দিন জীবনে আনে অসাধারণ শান্তি ও বরকত।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রতিটি আমলকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেন। প্রত্যেক আমলের জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব নির্ধারণ করেছেন। সওয়াব নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো কোনো নেক আমলের সওয়াব নির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, আবার কিছু আমলের পুরস্কার এতো বেশি যে তার কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে অসীম দয়ালু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমার রহমত সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। (সুরা আরাফ, আয়াত :১৫৬)।’
দয়ার এই ব্যাপকতার কারণেই নেক আমলের প্রতিদান কখনো দশ গুণ, কখনো সাতশ গুণ, আবার কখনো তারও বেশি হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘একটি নেক কাজের নিয়ত করলে কিন্তু তা সম্পন্ন না করলে, এক নেকি লেখা হয়। আর সম্পন্ন করলে ১০ নেকি থেকে ৭০০ নেকি, এমনকি আরও বেশি দেওয়া হয়।’ (বুখারি)
সীমাহীন সওয়াব রয়েছে এমন তিনটি আমল হলো- রোজা, সবর বা ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা। এ তিনটি আমলের পুরস্কার বা সওয়াব সীমাহীন। এই আমলগুলোর সওয়াবের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
রোজা
রোজা এমন একটি ইবাদত, যার প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন- রোজা আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম)
অন্য সব আমলের সওয়াবের পরিমাপ নির্ধারিত হলেও রোজার সওয়াব নির্দিষ্ট নয়, এর সওয়াব অসীম। কারণ রোজা শুধু ক্ষুধা-পিপাসা নয়, বরং দেহ, মন, চিন্তা ও আচরণের পূর্ণ সংযম।
রোজাদারদের সম্মানে জান্নাতে বিশেষ দরজা ‘আর-রাইয়ান’ থাকবে- যেখানে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে।
রমজানের ফরজ রোজার পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.) সোমবার–বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসের আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
সবর বা ধৈর্য
কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন- ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়াই দেওয়া হবে। (সুরা আজ–জুমার, আয়াত : ১০)
ইমাম আল-বাঘাবী বলেন, সবরের প্রতিদান এতো বেশি যে তা ওজন করে বা পরিমাপ করে দেওয়া হবে না।
সবর মানে কষ্টের মুহূর্তে হাল ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং উত্তম ফলাফলের প্রতি দৃঢ় আশা রেখে সহনশীল থাকা। সবর বা ধৈর্যের তিনটি প্রকার রয়েছে-
- গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য ধৈর্য ধারণ করা।
- ইবাদতে স্থির থাকার জন্য ধৈর্য ধারণ করা।
- বিপদ–আপদে ধৈর্য ধারণ করা।
সবরে শক্তি অর্জনের জন্য কোরআনে বর্ণিত দোয়া পড়তে পারেন-
رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ تَوَفَّنَا مُسۡلِمِیۡنَ
হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।’। (সুরা আরাফ, আয়াত :১২৬)
ক্ষমা
অন্যকে ক্ষমা করা এমন একটি গুণ, যার পুরস্কার আল্লাহ নিজেই নির্ধারণ করবেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন— যে ক্ষমা করে ও মীমাংসা করে, তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে। (সুরা আশ–শুরা, আয়াত :৪০)
একটি বর্ণনায় এসেছে, বিচার দিবসে ঘোষণা করা হবে- যারা মানুষের দোষ ক্ষমা করত, তারা সামনে আসুক; তাদের হিসাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
আরেক সহিহ ঘটনার বর্ণনায় দেখা যায়, একজন সাধারণ মুসলিমকে রাসুল (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন শুধুমাত্র এই কারণে যে- তিনি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন না এবং কারো প্রতি হিংসাও করতেন না।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন- শক্তিশালী সে নয়, যে কুস্তিতে জিতে; বরং শক্তিশালী সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (মুসলিম)