পৃথিবীতে ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেকে মারা যান এর কারণে। তবে অন্যান্য বিপর্যয়ের আগে কোনো না কোনো সতর্কবার্তা পাওয়া গেলেও, ভূমিকম্প প্রায়শই মুহূর্তের মধ্যে আসে, যা ব্যাপক ক্ষতি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূমিকম্প কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; এটি মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক গভীর সতর্কবার্তা। এমন সময় মানুষের দায়িত্ব হলো দ্রুত তাওবা করা, আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা, বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা এবং স্মরণে মগ্ন থাকা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আজাব রাতারাতি তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকবে?’ (সুরা আরাফ: ৯) এবং অন্যত্র উল্লেখ আছে, ‘তোমাদের ওপর যত বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজেদের কর্মফলের কারণে; আর আল্লাহ তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)
কোরআনে ভূমিকম্প বোঝাতে ‘যিলযাল’ ও ‘দাক্কা’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যিলযাল মানে কম্পনে কম্পন সৃষ্টি হওয়া, আর দাক্কা মানে প্রচণ্ড শব্দের অভিঘাতে কেঁপে ওঠা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করেছেন, ‘এই উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের সম্মুখীন হবে, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ঘটবে এবং মদপান বেড়ে যাবে।’ (তিরমিজি: ২২১২)
কিয়ামত যত নিকটবর্তী হবে, ভূমিকম্প তত ঘন ঘন ঘটবে। কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘ওহে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। নিশ্চয়ই কেয়ামতের ভূকম্পন হবে ভয়াবহ…।’ (সুরা হজ: ১-২)
হাদিসে ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে: অবৈধ সম্পদ অর্জন, আমানতের খিয়ানত, জাকাতকে জরিমানা ভাবা, ধর্মহীন শিক্ষা, আত্মীয়তার অবহেলা, মসজিদে অশালীন কথাবার্তা, অযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব ইত্যাদি। (তিরমিজি: ১৪৪৭)
অতএব, বর্তমানের ভূমিকম্পগুলো কেবল ভূগর্ভস্থ প্লেট সরণের ফল নয়; এগুলো মানুষের পাপাচার ও অবাধ্যতার জন্য আল্লাহর পাঠানো সতর্কবার্তা। ইতিহাসে দেখা যায়, আল্লাহ অনেক জাতিকে ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন। তাই প্রতিটি কম্পন আমাদের জন্য একটি স্মরণ; আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া, তাওবা করা, নেক আমল বৃদ্ধি করা এবং আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তার জন্য মন জাগানো।