ঢাকা
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভূমিকম্পে নিহতদের সম্পর্কে যা বলেছেন নবীজি (সা.)

আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। মাত্র ৩১ ঘণ্টার মধ্যে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু করে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ভূমকম্পন অনুভূত হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে ভূমিকম্পে নিহতদের বিষয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর বাণী। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এসব মৃত্যুকে শুধু দুর্যোগ নয়, বরং একটি বিশেষ মর্যাদার মৃত্যুরূপে বর্ণনা করা হয়।

কোরআন-হাদিসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্প মূলত মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতিকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, পরীক্ষা করেছেন। সতর্কবার্তা শুনেও যারা তার অবাধ্যতা থেকে ফেরেনি, তাদের কঠিন শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন তিনি। কখনো ধ্বংস করেছেন ভয়াবহ ভূমিকম্পের মাধ্যমে।

যেমন শোয়াইব (আ.)-এর জাতিকে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা, মাপে কম দেওয়া, অন্যের সম্পদ লুটপাট করা এবং অন্যায়ভাবে জনগণের সম্পদ ভক্ষণ করার কারণে ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। তারপর তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল।’ (সুরা আরাফ : ৯১)

এমনিভাবে লুত (আ.)-এর জাতিকেও অবাধ্যতা ও সমকামিতা প্রসারের কারণে ভূমিকম্প দিয়ে উল্টে দেওয়া হয়। এছাড়া সালেহ (আ.)-কে আল্লাহর নিদর্শন পাঠানো উষ্ট্রী হত্যার অপরাধে তার জাতিও ভূমিকম্পের আজাবে ধ্বংস হয়েছিল। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও তার উম্মতদের ভূমিকম্পের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। 

তিনি (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহর রাসুল?

তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে। (তিরমিজি : ২২১২)

তাই মুসলমানদের উচিত সমাজে ছড়িয়ে পড়া পাপাচার থেকে নিজেরা বিরত থাকা এবং পরিবার ও অন্য মুসলমানদেরও সতর্ক করা। তবে ভূমিকম্পের কারণে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দুর্ঘটনার শিকার হলে শুধু তাকে পাপিষ্ঠ ভাবার সুযোগ নেই। কেননা মহানবী (সা.) ভূমিকম্পে চাপে পড়ে নিহত হওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। 

আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার বাবা জাবের (রা.)-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন এবং দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘আমরা মনে করেছিলাম তুমি (জাবের রা.) আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।’

তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে।’ 

এরপর তিনি (সা.) জানান, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে (ভূমিকম্প বা যেকোনো দুর্ঘটনায়) মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ।’ (আবু দাউদ : ৩১১১)

নবীজি (সা.) বলেছেন- মুমিন যে কোনো বিপদে ধৈর্য ধরে ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন।

ধর্মীয় আলোচকরা বলছেন, ভূমিকম্পের মতো মহাবিপর্যয়ে আঘাতপ্রাপ্ত মানুষদের ধৈর্যই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, আর সেই ধৈর্যের মূল্য আল্লাহর কাছে অসীম।

LH/FJ
আরও পড়ুন