মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো জিহ্বা। একটি ভালো কথা দিয়ে যেমন কারও হৃদয় জিতে নিতে পারে, তেমনি একটি কটু বাক্য কারও মন ভেঙে দিতে পারে। মানুষের চরিত্র, ইমান , আদব—সবকিছুই জিহ্বার মাধ্যমে ফুটে ওঠে। আর তাই কুরআন ও সুন্নাহ মুমিনকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে সতর্ক করেছে—সেটি হলো জিহ্বার সংযম। মুমিন জানে— ‘কথা শুধু উচ্চারণ নয়, কথা হলো দায়িত্ব।’ যে তার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে নিজের জীবনকে সুন্দর করে নিতে পারে, পরকালকে করতে পারে নিরাপদ।
কুরআনের আলোকে জিহ্বার সংযম
১) গীবত নিষিদ্ধ
‘তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি ভালোবাসে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? তোমরা তো অবশ্যই তা ঘৃণা করবে।’ (সুরা হুজুরাত: আয়াত ১২)
২) সত্য কথা বলার নির্দেশ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল।’ (সুরা আল-আহযাব: আয়াত ৭০)
৩) অহেতুক কথায় সময় নষ্ট না করা
‘নিশ্চয়ই সফল হয়েছে মুমিনরা… যারা অর্থহীন (অপ্রয়োজনীয়) কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা আল-মুমিনুন: আয়াত ১–৩)
৪) জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে জান্নাত
‘যে ব্যক্তি আমাকে তার জিহ্বা ও গোপনাঙ্গের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’ (বুখারি ৬৪৭৪)
নবী (সা.) বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণী- যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে (তা সংরক্ষণের জন্য) তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী রয়েছে। (সুরাহ ক্বাফ: আয়াত ১৮)
৫) এক বাক্যেই হতে পারে ধ্বংস
‘নিশ্চয় বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ্ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারি ৬৪৭৮)
৬) ভালো কথা অথবা নীরবতা
‘যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে।’ (বুখারি ৫৫৯৩)
মুমিনের জিহ্বার বৈশিষ্ট্য
সদা সত্য কথা বলে
অকারণ কথা থেকে দূরে থাকে
গীবত, অপবাদ ও পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকে
কোমল ও সুন্দর কথা বলে
মানুষের মন ভাঙে না
রাগের সময় নীরবতা অবলম্বন করে