স্পেসএক্স মিশন থেকে বাদ রুশ নভোচারী

রাশিয়ান এক নভোচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসে যাওয়ার আসন্ন মিশন থেকে বাদ দিয়েছে ইলন মাস্কের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স। ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ’-কে কারণ হিসাবে দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

রাশিয়ার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইনসাইডার জানায়, আইএসএস এ ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা করতে যাওয়া চার সদস্যের ক্রু দলের একজন ছিলেন ৫৪ বছর বয়সী আরতেমিয়েভ। তবে তার বিরুদ্ধে স্পেসএক্সের রকেট ইঞ্জিন ও গোপন নথির ছবি তোলার অভিযোগ ওঠার পর তাকে মিশন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে তিনবার মহাকাশে গেছেন এই নভোচারী সর্বশেষ ২০২২ সালে। মোট ৫৬০ দিন মহাকাশে কাটানো আরতেমিয়েভকে অত্যন্ত অভিজ্ঞ নভোচারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়।

স্পেস শিল্প বিশ্লেষক জর্জি ত্রিশকিন এই সিদ্ধান্তকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এত অভিজ্ঞ একজন নভোচারীর কাছ থেকে এমন ভুল হওয়া কল্পনা করাই কঠিন।’

রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস অবশ্য এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। টেলিগ্রামে প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা জানায়, অন্য দায়িত্ব গ্রহণ করায় আরতেমিয়েভকে ক্রু তালিকা থেকে সরানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। বরং আরতেমিয়েভকে ‘রাশিয়ার নায়ক’ বলেই উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

এদিকে, স্পেসএক্স বা নাসা দুই সংস্থাই এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আরতেমিয়েভের পরিবর্তে আন্দ্রেই ফেদ্যায়েভ কে যুক্ত করা হয়েছে আসন্ন ক্রু-১২ মিশনে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মিশনটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং ক্রুরা আইএসএস-এ ছয় মাস অবস্থান করবেন।

রাশিয়ার মহাকাশ কর্মসূচিতেও যোগ হয়েছে নতুন অস্থিরতা। গত সপ্তাহে রকেট উৎক্ষেপণের পর রাশিয়ার একমাত্র সক্রিয় মানববাহী রকেট লঞ্চপ্যাড কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রসকসমস জানায়, লঞ্চপ্যাড মেরামত না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন কোনো রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারবে না।

এটি ১৯৬১ সালের পর এই প্রথম রাশিয়া সাময়িকভাবে মানববাহী মহাকাশ মিশন পাঠানোর সক্ষমতা হারাল বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘সয়ুজ এমএস-২৮’ রকেটটি স্বাভাবিকভাবেই উড়লেও, রসকসমসের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায় উৎক্ষেপণের তীব্র কম্পনে লঞ্চপ্যাডের কিছু অংশ নিচের নিষ্কাশন খাদে ধসে পড়ে। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্যাডের একাধিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও রকেটে থাকা কোনো নভোচারি আহত হননি।

রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেসএক্স ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে দীর্ঘদিনের মহাকাশ সহযোগিতা নতুন করে চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আরতেমিয়েভকে মিশন থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনা দুই দেশের স্পেস সহযোগিতায় আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: দ্যা মস্কো টাইমস