একসময় পায়রা বা কবুতর ব্যবহৃত হতো চিঠি আদান-প্রদানে। কিন্তু এবার প্রযুক্তির কল্যাণে সেই পায়রাই হয়ে উঠছে মানুষের ইশারা চালিত ‘জীবন্ত ড্রোন’। রাশিয়ার নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি ‘নিইরি’ (Neiry) দাবি করেছে, তারা পায়রার মস্তিষ্কে বিশেষ নিউরোচিপ বসিয়ে সেগুলোকে ড্রোনের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।
কোম্পানিটি এই বিশেষ প্রযুক্তির নাম দিয়েছে ‘বায়োড্রোন’। তাদের দাবি, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অপারেটররা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সত্যিকারের পাখিকে আকাশে ওড়াতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
নিইরি জানিয়েছে, প্রচলিত ড্রোনের মতো এই বায়োড্রোন চালাতে পাখিকে কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। অস্ত্রোপচার করে পাখির মস্তিষ্কে একটি চিপ বসানো হয়। এরপর পাখির পিঠে একটি ছোট স্টিমুলেটর ও কন্ট্রোলার লাগিয়ে দেওয়া হয়। গবেষকরা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠান, যার ফলে পাখির মনে হয় সে নিজেই ডানে বা বামে ঘুরতে চাইছে। অপারেটররা জিপিএস-এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে পাখির অবস্থানও ট্র্যাক করতে পারেন।
কোম্পানিটির দাবি, যান্ত্রিক ড্রোনের তুলনায় জীবন্ত ড্রোনের সুবিধা অনেক বেশি
১. দীর্ঘ সময় ওড়া: ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় নেই, পাখি তার স্বাভাবিক নিয়মেই দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারে।
২. শহরের জন্য উপযোগী: ঘনবসতিপূর্ণ শহরে দালানকোঠার ভিড়ে যান্ত্রিক ড্রোনের ধাক্কা খাওয়ার ভয় থাকে, কিন্তু পাখিরা প্রাকৃতিকভাবেই এসব বাধা এড়িয়ে চলতে ওস্তাদ।
৩. পাল্লা বা রেঞ্জ: একটি ‘পিজেএন-১’ (PJN-1) মডেলের বায়োড্রোন দিনে প্রায় ৩১০ মাইল (প্রায় ৫০০ কিমি) পথ পাড়ি দিতে পারে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকলে সপ্তাহে এটি প্রায় ১,৮৫০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
শুধু পায়রাতেই থেমে থাকছে না রুশ এই কোম্পানি। নিইরি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার পানভ জানান, ‘বর্তমানে পায়রা দিয়ে কাজ চললেও ভবিষ্যতে যেকোনো পাখিকেই বাহক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আমরা ভারী বস্তু বহনের জন্য কাক, উপকূলীয় এলাকা নজরদারির জন্য গাঙচিল এবং বিশাল সমুদ্র অঞ্চলে ব্যবহারের জন্য অ্যালবাট্রস পাখি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছি।’
কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই বায়োড্রোন তৈরির খরচ সাধারণ ড্রোনের মতোই এবং শিগগিরই এটি নজরদারির কাজে বাজারে ছাড়া হবে। তবে এই প্রযুক্তির পরীক্ষায় কতগুলো পাখির মৃত্যু হয়েছে বা অস্ত্রোপচারের পর পাখিগুলোর শারীরিক ও মানসিক কী ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি নিইরি। প্রাণী অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, প্রযুক্তির নামে এটি পশুপাখির ওপর এক ধরনের নিষ্ঠুরতা হতে পারে।
বিজ্ঞানের ধারণা বদলে দিলো ‘ফায়ার অ্যামিবা’
মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি