বেঁচে থাকার মতো দম্পতির আর কোনো সম্বল নেই!

আমি এহন কোথায় যাবো? কেমনে চলবো? আমার তো আর কিচ্ছু রইলো না। আল্লাহ কি আমারে দেখছিলেন না! এর থেকে আমারে নিয়া গেলেও তো পারতেন। কান্না করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আমিন ইসলাম। তার আহাজারি দেখে মনে হবে হয়তো, তিনি আদরের সন্তান হারিয়ে এমন করছেন। কিন্তু না! আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া শেষ সম্বল গরুর খামার হারিয়ে এমন আহাজারি করছেন রাজধানীর পূর্ব বাড্ডার বড়টেক এলাকার আমিন-শেফালি দম্পতি।

জানা যায়, তিলে তিলে করা তাদের খামার শুক্রবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আকস্মিক আগুন লেগে পুড়ে যায়। যেখানে ছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা মূল্যের ৩টি গাভি ও ২টি ভেড়া।

কয়েক বছর আগে তাদের টানাটানির সংসার দেখে স্থানীয় এক লোক জায়গা দিয়েছিল থাকার জন্য। কিন্তু সুখের আশায় তাদের থাকার জায়গার মধ্যে এনজিও থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে খামার শুরু করেন এই দম্পতি। ফলে ছেলে-মেয়ে ভিটেবাড়ি বিহীন এই দম্পতির গরুর দুধ বিক্রিই ছিল সংসার চালানোর মূল উৎস। কিন্তু তাদের এই সুখ দীর্ঘ হতে দেয়নি সর্বনাশা আগুন।

বজ্রপাতের মত হঠাৎ লেগে যাওয়া এই আগুনে সহায় সম্বল হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন অসহায় এই দম্পতি। একদিকে নিঃস্ব হওয়ার বেদনা অন্যদিকে এনজিও’র দেনার কারণে উপরওয়ালার কাছে মৃত্যু কামনা করছেন তারা।

খামারি আমিন ইসলাম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আগুন আমার চোখের সামনে সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আগে আমি মানুষের কাজ কইরা সংসার চালাইতাম। কিছু দিন আগে এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি আমার দুঃখ-দুর্দশা দেখে উনার পরিত্যক্ত এক জায়গায় আমাদের থাকতে দেয়। কিন্তু আমি এনজিও থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সেখানে একটা খামার দেই। 

তিনি বলেন, খামারের গাভির দুধ বেচে কোনোভাবেই সংসার চালাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম আল্লাহ্ হয়তো এইবার আমার দিকে ফিরে থাকাবেন। কিন্তু তা আর হলো না। আগুন আমার সকল কিছু শেষ করে দিল। কিচ্ছু তো আর রইলো না!

আমিনুলের স্ত্রী শেফালি বেগম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আমরা ভালোই চলছিলাম। ভাবছিলাম আল্লাহ্ হয়তো আমাদের আর কারো কাছে হাত পাততে দিবে না। কিন্তু কপালের পোড়া দাগ কি আর মিটবার পারে! উনি আর আমি মিলে সার দিন খামারের পিছনে সময় দিতাম। সকালে আমি গাভি থেকে দুধ দোহন কইরা দিতাম। আর উনি বাজারে নিয়ে বিক্রি করত। এইখান থেকে দুই জনার সংসার চালিয়ে এনজিও‘র দেনা শোধ করতাম। কিন্তু এহন আমরা কি করব? আর কই যাইমু কিছুই বুঝছি না। আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

আরিফ হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, এই দম্পতি খুবই অসহায়। তাদের এই আহাজারি দেখে আমরা আপ্লুত হয়ে যাচ্ছি। তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক যুদ্ধ করেছিল। তাছাড়া এনজিও থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়ে এই খামার দিয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু আগুন লেগে তাদের সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। এখন যদি সরকার ও এনজিওগুলো তাদের প্রতি সদয় না হয়, তাহলে তাদের মরণ ছাড়া আর কোনো রাস্তা থাকবে না।

নজির হোসেন নামে আরেকজন বলেন, তাদের এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা  তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছি। এর থেকে আর বেশি কি করার আছে আমাদের। তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা তো আর পূরণ করতে পারবো না। এই অসহায় দম্পতির পাশে যদি এনজিওগুলো মানবিক দৃষ্টি দেয় তাহলে হয়তো তারা নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি পাবে। আমরা চাই সরকার এবং এনজিওগুলো যেন তাদের প্রতি সহায় হয়।