ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভরা মৌসুমে ফলের সরবরাহ কম, দাম চড়া

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম

জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয়ে থাকে মধু মাস। কেননা এই মাসে দেখা মেলে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস লিচুসহ নানান ধরনের মৌসুমি ফলের। গ্রীষ্মকালে বাজারে এসব ফলের একক আধিপত্য থাকলেও এবছর একটু ভিন্ন। তীব্র তাপপ্রবাহ, সরবরাহ কমসহ নানান কারণে এসব ফলের বাজারের বেহাল অবস্থা। 

ক্রেতারা বলছেন, অপরিপক্ক ফল, লাগামহীন দাম এবং কেমিক্যালের কারণে ফলের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। 

আর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা সংকট এবং সরবরাহ কম থাকায় এবছর ব্যবসা মন্দা। এবং গরম বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ ফলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবছর লাভের তুলনায় লোকসানের তালিকা দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর কাওরান বাজার, রামপুরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, লিচু ছাড়াও বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দেশি বিদেশি ফল। তবে চাহিদার তুলনায় আম, লিচু কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের সরবরাহ অনেকটাই কম রয়েছে। তাছাড়া বাজারে যেসব আম, লিচু পাওয়া যাচ্ছে, তার একটি বড় অংশই অপরিপক্ক এবং চড়া দাম। মধুমাস হলেও ফলের বাজার পুরোপুরি জমে ওঠেনি। প্রচণ্ড গরমের কারণে কিছু ফল পচে যাওয়ায় লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশি পাওয়া যাচ্ছে হিমসাগর জাতের আম। এরপরেই জায়গায় রয়েছে ল্যাংড়া আম। আর খুব অল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে গোবিন্দভোগ, কাঠিমন, বারিফল। তাছাড়া থাইল্যান্ডের বানানা ম্যাংগো আম ও বিদেশি কয়েক প্রজাতির লিচুও পাওয়া যাচ্ছে কিছু দোকানে।

হিমসাগর আম কেজি প্রতি নেয়া হচ্ছে ১২০-১৮০ টাকা, আম্রপালি ১২০ টাকা, গোবিন্দভোগ ১৮০ টাকা, বারিফল ৩০০ টাকা, কাঠিমন ২০০ টাকা, সাতক্ষীরার গোপালভোগ ৩৫০ টাকা, থাইল্যান্ডের বানানা ম্যাংগো ৬০০ - ৮০০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে টানিয়ে রাখা হয়েছে নানান প্রজাতের লিচু। রসে ঠাসা এসব লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে প্রতি ১০০ পিস ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা দামে। পাবনার লিচু প্রতি ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। দিনাজপুরের লিচু প্রতি ১০০ পিস ৪৫০ টাকায়। তাছাড়া বেদানা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়, বোম্বাই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় এবং সবচেয়ে বেশি দামে চায়না থ্রি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তাছাড়া রাঙামাটির আনারস প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায় এবং মধুপুরের আনারস প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। জাম প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা এবং কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকা করে প্রতি পিস।

 

আখলাকুল রহমান নামে এক ক্রেতা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, সারা বছর এই মাসের অপেক্ষায় থাকি। ফলের মৌসুম হওয়ায় নানান ধরনের ফল খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকি। কিন্তু ফলের দাম অনেক। তাও বেশির ভাগ ফল অপরিপক্ক। 

সুয়েব মিয়া নামের আরেক ক্রেতা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ফলপ্রেমিদের জন্য জ্যৈষ্ঠ মাস একটু আবেগের। তবে যে দাম তা সাধ্যের বাইরে। জাম নিয়েছি ২৮০ টাকা কেজি করে। এর আগে একটা আনারস খেয়েছি ৪০ টাকা দিয়ে। আনারস দেখে জিভের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন দেখি ভিতরে বেশিরভাগই অপরিপক্ক।

ক্রেতা জহুর মিয়া বলেন, কী খাবো! সবই তো কেমিক্যাল, তবুও আমাদের খেতে হয়। এই যে লিচু দেখছেন তাতে মনে হচ্ছে ভিতরে রসে ভরপুর। কিন্তু মুখে দিলে স্বাদ পাওয়া যায় না। সব ধরনের ফল এখনও আসেনি। দাম বেশি এবং অপরিপক্ক ফলে বাজার সয়লাভ হয়ে গেছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও তেমনভাবে ফল কেনা হচ্ছে না।

ফল ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, এবছর ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া এটা সত্য যে দামও অনেক বেশি এবছর। তবে অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেন কেমিক্যাল নিয়ে। আসলে কেমিক্যাল আমরা মেশাই না। এটা বাগান মালিকরা ফলগুলো গাছে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের স্প্রে করেন। 

শাহাবুদ্দিন নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, ক্রেতাদের আনাগোনা কম। সবাই দাম করে চলে যায়। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে বেশিরভাগ ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এসময় তিনি আরও বলেন, বাগান মালিকরা বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আর সেই দামের প্রভাব ক্রেতাদের উপর পড়ে।

NC/AST
আরও পড়ুন