এখন কী করবে বিএনপি?

বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বরং অনেকটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত নতুন সরকার গঠনের দিকে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। বলা যায়, বড় ধরনের কোনো বিপত্তি না ঘটলে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছে দলটি। ভোট বর্জন করা বিএনপি এখন কী করবে, ক্ষমতার বাইরে থাকতে থাকতে দলটি কী বিলীন হয়ে যাবে? এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

যতটুকু জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে নিজেদের সফলতা হিসেবেও দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ একতরফা ভোট বর্জন করেছে। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হলেও মূলত ৫-১০ ভাগ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে এই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াকে আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা।

আন্দোলনও চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে পরিস্থিতি বুঝে সামনের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তাই আপাতত রয়েসয়ে রাজপথে থাকার উপায় বেছে নিয়েছে তারা। কেননা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অধিকাংশ নেতা-কর্মীই এখন জেলে। মঙ্গলবার ও বুধবার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।

বিএনপি মনে করছে, এই নির্বাচন হয়েছে ভোটারবিহীন। দেশে-বিদেশে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাদের প্রত্যাশা, এমন ভোটের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব সোচ্চার হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগের পদক্ষেপ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন সরকারের টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, নির্বাচন হলেও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি। প্রাথমিকভাবে ন্যূনতম দেড় মাস কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সভা-সমাবেশসহ জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে কর্মসূচির ফাঁকে মাঝে মধ্যে হরতালও দেওয়া হতে পারে। নতুন সরকারের শপথ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম দিন হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে।

সরকারকে চাপে ফেলতে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেন কেউ কেউ। তবে নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় উঠে এসেছে, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিলে সেটিকে ঘিরে অন্য কোনো পক্ষ নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর এর দায় চাপিয়ে দেয়। বিএনপি সরকার বা অন্য কোনো পক্ষকে এমন সুযোগ দিতে চায় না। তা ছাড়া বিএনপির বহু নেতাকর্মী এখন কারাগারে। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে ঘরছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের আগে কারামুক্ত করা দরকার। এখন কঠোর কর্মসূচিতে গেলে তাদের জামিন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।

নেতাদের ধারণা, নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন সরকার তাদের মুক্তিতে বাধা সৃষ্টি নাও করতে পারে। সরকার বাধা না দিলে কম সময়ের মধ্যে তারা জামিনে কারামুক্ত হতে পারেন। এতে দল নতুন করে সুসংগঠিত, চাঙ্গা হবে, আন্দোলন এগিয়ে নিতে যা সহায়ক হবে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের হতাশ না হয়ে এসব আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।