ধন-দৌলত, সুরম্য অট্টালিকা দিয়ে কি সংসার ভাঙা রোধ করে যায়? একদমই না। সংসার বা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একমাত্র টনিক মনের মিল। মনের অমিলে মধুর সম্পর্ক হয়ে উঠতে পারে চিরতার মতো তিতা। রাজপ্রাসাদ পরিণত হয় বিস্বাদে। শেষতক সম্পর্ক গড়ায় বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সে। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক ও ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় সানিয়া মির্জা। গত কয়েক বছরে বিশ্ব কাঁপানো এমন কয়েকটি ডিভোর্স নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
শোয়েব-সানিয়ার বিয়ে কতই না আলোচিত ছিল। চিরশত্রু দুই দেশের কাঁটাতারের বেড়া টপকে জয় হয়েছিল তাদের ভালোবাসার। সেই প্রেম আর টিকল কই। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের জগতে আলোচিত উদাহরণ হলেন শোয়েব-সানিয়া। তাঁদের বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ পেতেই গুঞ্জন উঠেছে কত টাকা সানিয়াকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হচ্ছে শোয়েবকে।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সানিয়া মির্জার মোট সম্পদের পরিমাণ ২১৬ কোটি রুপি, যেখানে শোয়েব মালিকের ২৩০ কোটি। বিপুল বিত্তের অধিকারী এই দুই ক্রীড়া তারকার বিচ্ছেদ তাই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের হাইপ্রোফাইল বিচ্ছেদগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে আলোচিত এক বিচ্ছেদ ছিল দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল-মাখতুম এবং প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল হোসেইনের মধ্যে। ডিভোর্সের পর জর্ডানের সাবেক রাজা হুসেইনের কন্যা ৪৭ বছর বয়স্ক প্রিন্সেস হায়াকে এককালীন ২৫ কোটি ১৫ লাখ পাউন্ড দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। সব মিলিয়ে ৫০ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ পান।
শেখ মোহাম্মদ শুধু দুবাইয়ের ধনাঢ্য শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ঘোড়দৌড়ের জগতেও রেসের ঘোড়ার একজন প্রভাবশালী মালিক। হায়া ছিলেন শেখ মোহাম্মদের ষষ্ঠ এবং কনিষ্ঠতম স্ত্রী। প্রিন্সেস হায়া ২০১৯ সালে তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ব্রিটেনে পালিয়ে যান।
প্রিন্সেস হায়া তাঁর এক ব্রিটিশ দেহরক্ষী সাবেক সেনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানতে পারেন শেখ মোহাম্মদ। তখন তিনি ‘তুমি বেঁচে ছিলে, তুমি মরে গেছো’ নামে একটি কবিতা প্রকাশ করেন। এই কবিতার মাধ্যমে হায়াকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অনুমান করা হয়। হায়ার দাবি, ব্রিটেনে আসার পরও তিনি হুমকি পেয়েছেন। যদিও শেখ মোহাম্মদ বলেছিলেন, প্রিন্সেসের কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা তার নেই।
বিয়ের ২৭ বছর পর ২০২১ সালের ৩ মে হঠাৎ স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে গোটা বিশ্বকে হতবাক করে দেন মাইক্রোসফটের মালিক ধনকুবের বিল গেটস। এক বিবৃতিতে বিল ও মেলিন্ডা জানান, বিচ্ছেদের পরও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে সহায়তা দিতে একসঙ্গেই গেটস ফাউন্ডেশনের কাজ এগিয়ে নেবেন তাঁরা। গেটস ফাউন্ডেশনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলার। অন্যদিকে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিল ও মেলিন্ডার যৌথ মালিকানায়ও রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
২৫ বছরের সংসার ভেঙে যাওয়ার খবর ২০১৯ সালের এপ্রিলে দেন মার্কিন ঔপন্যাসিক ও মানবহিতকর কাজের জন্য বিখ্যাত ম্যাকেঞ্জি স্কট। তাঁর সাবেক স্বামী আমাজন ডটকমের মালিক জেফ বেজোস ছিলেন ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ফলে ২০১৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হলে সেটিও বেশ আলোচনায় ছিল। গণমাধ্যমগুলো সে সময় জানিয়েছিল, বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হলে ম্যাকেঞ্জি স্কটকে ৩৬ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন বেজোস। আর এই অর্থ পাওয়ার পর বিশ্বের অন্যতম ধনী নারীতে পরিণত হন ম্যাকেঞ্জি।