হাড়ভাঙা পরিশ্রমেও কপালে জোটে না মাছ-মাংস

গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যাংকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে পেশাজীবীদের গরমের উত্তাপ কমাতে পারলেও অস্বস্তিতে খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষ। আর নিম্নআয়ের মানুষরা সমাজে শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। তীব্র গরমেও যাদের এতটুকু ফুসরত নেই বিশ্রাম করার। উল্টো হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দিনশেষে কপালে জুটছে না মাছ-মাংস।

Van 2

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তীব্র গরমের মাঝেও তারা কাজ করছে। কাজে না গেলে আবার পেটে ভাত জুটবে না। ফলে নিরূপায় হয়েই তারা কাজ করছেন। কিন্তু তীব্র গরমে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে কতটুকু সুখী জীবনযাপন করতে পারছেন শ্রমিকরা? এমন প্রশ্ন ছিলো তাদের কাছে।

মালিবাগ বাজারে গার্মেন্টস শ্রমিক জাহানারা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ৩ বছর আগে ৮ হাজার ৫০০ টাকায় বেতনে চাকরিতে ঢুকেন। দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে এই টাকায় চলতে পারেন না। চলতি বছরে বেতন বাড়বে বলে শুনেছেন। কিন্তু এখনো বেতন বাড়েনি। বাজারে গেলে মাছ মাংস না কিনেই বাসায় ফিরতে হয়। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের বাজারে সন্তানদের মুখে ভালো খাবার তুলে দিতে পারি না। একরকম মানবেতর জীবনযাপন করছি।

রাজধানীর কাপ্তানবাজারে মুদি দোকানের কর্মচারি আসাদুল বলেন, মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। বাবা অসুস্থ। দুই বোন আর মাকে নিয়ে এই টাকায় কিছুই হয় না। কোনরকমে পরিবার চলতেছে। অন্য সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে এই চাকরি করছি।

Van 3

রাজধানীর শান্তিনগরে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের গার্ডের চাকরি করেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রণজিত মন্ডল। তিনি জানান, ১০ হাজার টাকা বেতনে ২ বছর আগে এই চাকরি শুরু করেন। চার সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে পরিবার চালাতে পারেন না। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভাত-ডাল খেতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। উপরন্তু প্রতিমাসে দুই সন্তানের ডাক্তার ও ঔষধের পিছনে ব্যয় করতে হয় যা, তা তাকে ধার করতে হয়।

নয়াপল্টন এলাকায় কথা হয় ফেরি করে হাঁড়ি পাতিল বিক্রেতা সিলেটের হবিগঞ্জের আওয়াল মিয়ার (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন , ৩৭ বছর ধরে হকারি করে এই পণ্য বিক্রি করছি। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। প্রতিমাসে ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয়। খাওয়া-লওয়া নিয়া আর টাকা অবশিষ্ট থাকে না।

Van 4

সেগুনবাগিচা এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক রবিউলের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরমে আমাগো পেটে লাথি মারছে। গরমের জন্য এখন ভাড়া টানতে পারি না। দিনে ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয় । কিন্তু এই গরমে এতো কষ্ট করে একটু ভালোমন্দ খাইতে পারি না। গরিব গরমেও মরে, ভাতেও মরতেছে।