ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব

কক্সবাজারে ২০ গ্রাম প্লাবিত, ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৩ স্থাপনা

কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫৩টি কাঁচা স্থাপনা। মহেশখালীতে গাছের ডাল পড়ে আবুল কালাম (৭৫) নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷ জেলায় প্রস্তুত ৬৩৮ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি কেন্দ্রে ৯৭৮৭ জন বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। সংকেত নামার পর আশ্রিত বাসিন্দারা বাড়ি ফিরে যায়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধস ও প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। 

সোমবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় বয়ে গেছে বজ্রবৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। আরও কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ দিকে প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগর। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকত ও উপকূলে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে তলিয়ে যায় সৈকতের লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্ট। কক্সবাজার সদরের গোমাতলী, চৌফলদন্ডী, মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাটা, কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনের কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের, মাঠের লবণ ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাজলে। ঝড়ের সময় উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হচ্ছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। 

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হচ্ছে। এই মুহূর্তে সাগরে গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করছে। এ কারণে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার জেলায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আরও দু-একদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করবে কক্সবাজারে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ো হাওয়া বেশি হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 

জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। একারণে মাছ ধরার সমস্ত ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে। যদিও ৯ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ করা হয়েছে। তারপরও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে যাবে না কোন মাছ ধরার ট্রলার। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, নিচু এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে৷ ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় মানুষ ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি কক্সবাজারে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। 

এদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদরের ২১টি পয়েন্টে উচ্চ জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ফলে ৪১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।