কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা দেশে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ৮ মার্চ থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
চীনা কোম্পানি এসপিআইসি উইলিং পাওয়ার করপোরেশনের আর্থিক সহায়তায় ইউএস–ডিকে গ্রিন এনার্জি বিডি লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদরসহ খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডি ও ভারুয়াখালী–এ চার ইউনিয়নের উপকূল রেখাজুড়ে ২২টি টার্বাইন বা পাখা বসানো হয়েছে। প্রতিটি টার্বাইন থেকে ৩ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও পরিকল্পনা) মুকিত আলম খান বলেন, প্রায় ১১৬.৫১ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘খুরুশকুল বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শুরু হয়। একই বছরের ৩১ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম টারবাইন (পাখা) উত্তোলনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এরপর গত বছরের ২৬ মে ১০টি টার্বাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এরপর গত ৮ মার্চ থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করার পর এখন কেন্দ্রটি থেকে প্রতিদিন ৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। আর এ প্রকল্পের সাফল্যের সূত্র ধরে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রকল্পটিকে উত্তর দিকে সম্প্রসারিত করে আরও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা বাড়িয়ে ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।

মুকিত খান বলেন, কক্সবাজার খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হিসাবে পরিণত হয়েছে। যেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গড়ে ৩ একর জমির প্রয়োজন হয়, সেখানে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৭.৫ একর জমিতে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় ১ হাজার ৫০০’র বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রটি ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে। কেন্দ্র বছরে প্রায় ১৪ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৪৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কয়লা। আর এ থেকে নিঃসরণ হয় প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কার্বন–ডাই–অক্সাইড।
জানা যায়, এই কেন্দ্রটির কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাটি ১৮ বছরের ব্যবস্থাপনা চুক্তির অধীনে প্রতি ইউনিট ১২ সেন্ট মার্কিন মুদ্রায় সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে, বায়ুর গুণমান উন্নত করতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর দেশের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা–ধরা এর জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বায়ু শক্তির সম্ভাবনার মূল্যায়ন শীর্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) পরিচালিত এক জরীপে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ হাজার মেগাওয়াটের বায়ু শক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ইউএসএআইডি অর্থায়নে চালানো এই সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশের ২০ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি ভূমি জুড়ে বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫.৭৫ থেকে ৭.৭৫ মিটারের মধ্যে রয়েছে। যা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বায়ু সম্পদের ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১ হাজার ৪১৪ একর জমির উপর ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জানায়, কক্সবাজারে পিডিবির অধীনে প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে, যাদের বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ৪৫ মেগাওয়াট। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীনে গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৭৩ হাজার, যাদের বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। বর্তমানে কক্সবাজারে কোনো লোডশেডিং নেই বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
