কর্মস্থলে ফিরছে পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ সদস্য আহত-নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ প্রধানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মে ফেরার আহ্বানে ফিরতে শুরু করেছেন তারা। ধানমন্ডি মডেল থানায় ৪৫, মোহাম্মদপুর ৫, আদাবর শূন্য সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি সকল পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে আহ্বান জানান। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। 

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও সকল পুলিশ সদস্যদের মুঠোফোনে এক খুদে বার্তা পাঠিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সবাইকে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয় সেই বার্তায়। 

খুদে বার্তায় আরও বলা হয়, পুলিশ সদস্যরা নিজ কর্মস্থলে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। এরপর সেনাপ্রধানের সহযোগিতায় বঙ্গভবনে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন। বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি বিমানে করে তাদের দুই বোনকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পৌঁছে দেওয়া হয়। 

এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত সোমবার ৬ আগস্ট বিকেল থেকে সারাদেশে অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ও পুলিশ সদস্যদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথিপত্র লুট করা হয়। 

প্রাণভয়ে পুলিশ সদস্যরা নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করেন। নিশ্চিত মৃত্যুভয় জেনেও জীবন নাশের হুমকি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে তারা এখনো অনুপস্থিত রয়েছেন। ভয়ে সহসা কর্মস্থলে ফিরতে এবং সাহস ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না অধিকাংশ থানায়।

তবে পুলিশপ্রধান ময়নুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করে আরও ঘোষণা দেন, সংঘর্ষ-সহিংসতায় যেসব ছাত্র, সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পুলিশকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ময়নুল ইসলাম। 

শুকবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, ধানমণ্ডি মডেল থানা ঘুরে দেখা যায়, সামান্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ফিরেছেন। তাদের চোখেমুখে ভীতি কাজ করছে। সদ্য ফেরা থানার পুলিশ সদস্যদের কর্মেফেরার তালিকা লিপিবদ্ধ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। 

মোহাম্মদপুর থানার দায়িত্বে থাকা সেনাকর্মকর্তা দৈনিক খবর সংযোগকে জানান, সকাল থেকে মোট ৫ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে ফিরেছেন, থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) বিকেল অথবা সন্ধ্যায় কাজে যোগদান করবেন বলে আশা করেন তারা। 

এ ছাড়া আদাবর থানায় এখন পর্যন্ত কোনো পুলিশ সদস্য উপস্থিত হয়নি। ব্যতিক্রম দেখা যায়, ধানমন্ডি মডেল থানায়। সেখানে সকাল থেকে দুপুর অবধি মোট ৪৫ জন পুলিশ সদস্য কাজে যোগদান করেছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো আগুনে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে প্রতিটি থানা কমপ্লেক্সজুড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী প্রতিটি থানায় পুলিশ সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। 

ছাত্র-জনতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া থানাগুলো ধ্বংসস্তুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। থানার সামনে ও ডাম্পিংয়ে থাকা গাড়িগুলোও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। 

সরকারের পতনের পর রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশি ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে নতুন করে শুরু হয়েছে হানাহানি। বেড়ে গেছে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা। এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে অভিযোগ, মামলা এবং জিডি (সাধারণ ডায়েরি) কিছুই করতে পারছেন না। 

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর,মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী থেকে লুটপাট করা হয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা জিনিসপত্র। দুর্বৃত্তরা থানা থেকে টেলিফোন সেট, কম্পিউটার ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), আগ্নেয়াস্ত্র ও রসদ সরঞ্জামাদি সব লুট করে নিয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানার ৪৮ জনসহ সারাদেশে মোট ৯৮ জন পুলিশ সদস্য খুনের স্বীকার হন।