আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর চার বছর পর তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে আগামী সপ্তাহে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএফপি বিচার কার্য শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আটজন পেশাদার চিকিৎসাকর্মীর মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে মামলা করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে সেই মামলার বিচারিক কার্যক্রম পিছিয়ে নেয়া হয় চলতি বছরের মার্চে।
সাতজন স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে বুয়েনস আইরেসের শহরতলি সান ইসিদ্রোতে মঙ্গলবার শুরু হবে এই বিচারকার্য। এই বিচারপ্রক্রিয়া চলবে চার মাস। ম্যারাডোনার পরিবারের সদস্যসহ একশোরও বেশি সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে তারা আট থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
এই মামলার আসামিরা হলেন নিউরোসার্জন লিওপোল্ডো লুক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অগুস্তিনা কোসাচোভ, মনোবিজ্ঞানী কার্লোস দিয়াজ, মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর ন্যান্সি ফরলিনি, নার্সিং কো-অর্ডিনেটর মারিয়ানো পেরোনি, ডাক্তার পেদ্রো পাবলো দি স্পাগনা এবং নার্স রিকার্ডো আলমিরো। অন্য এক নার্স, গিসেলা দাহিয়ানা মাদ্রিদ, আলাদাভাবে বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য আবেদন করেছেন এবং তার বিচার জুলাইয়ে শুরু হবে।
দিয়েগো ম্যারাডোনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন মাদক এবং অ্যালকোহলের আসক্তির সঙ্গে লড়াই করে আসছিলেন। তার মৃত্যু ঘটে ব্রেইন সার্জারির পর, যখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দুই সপ্তাহ পর, বুয়েনস আইরেসের এক বিলাসবহুল ভাড়া বাড়িতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তে ম্যারাডোনার স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা জানা যায়। তবে ম্যারাডোনা শেষ সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।
সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাপূর্ণ’ এবং ‘ত্রুটিপূর্ণ’ চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ এনেছেন। তারা বলছেন, ম্যারাডোনাকে ‘দীর্ঘসময় ধরে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে’ এবং উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন।
২০২১ সালে আর্জেন্টিনার পাবলিক প্রসিকিউটরের আহ্বানে গঠিত ২০ সদস্যের এক মেডিকেল প্যানেল জানিয়েছিল, ‘যথাযথ চিকিৎসা এবং একটি উপযুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকলে ম্যারাডোনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকত।’
অন্যদিকে, অভিযুক্তরা সকলেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কোসাচোভের আইনজীবী ভাদিম মিশচানচুক বলেন, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে না, কারণ তিনি শারীরিক নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্য দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন।’
ম্যারাডোনার পরিবার দাবি করেছে যে ফাঁস হওয়া অডিও এবং মেসেজে ফুটে উঠেছে, তার স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। ম্যারাডোনার ছেলে দিয়েগুইটোর আইনজীবী মারিও বাউদ্রি বলেন, ‘এই বার্তাগুলো থেকে বোঝা যায়, চিকিৎসক দলের কৌশল ছিল ম্যারাডোনার মেয়েদের দূরে রাখা, কারণ তারা হস্তক্ষেপ করলে চিকিৎসকরা আর্থিক সুবিধা হারানোর ঝুঁকিতে পড়তেন।’