সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে সরকারের রোষানলে পড়েছেন কিংবদন্তি টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের ঘনিষ্ঠ মহল এখন তাকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী এই তারকা দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন।
জার্মান সংবাদমাধ্যম এনজেডজেড–এর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, জোকোভিচ পরিবার নিয়ে সার্বিয়া ছেড়ে গ্রিসে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন।
গত ডিসেম্বর থেকে চলা ছাত্র আন্দোলনে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘আমি তরুণদের শক্তিতে বিশ্বাস করি। তাদের কণ্ঠস্বরই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়বে। তারা আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং তাদের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত।’
আন্দোলনের সময় নিহত এক শিক্ষার্থীর স্মরণে চলতি বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয় উৎসর্গ করেছিলেন জোকোভিচ। এই অবস্থানের জেরেই সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু করেছে। অভিযোগ তোলা হচ্ছে, ‘দেশের জন্য কিছুই করেননি।’ এমনকি তার চলাফেরার উপরও প্রশাসনের নজরদারি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সার্বিয়ার নিরপেক্ষ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিবারের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করছেন জোকোভিচ। এদিকে সরকার জানিয়েছে, তিনি চাইলে দেশ ছাড়তে বাধা দেওয়া হবে না।
টেনিস টোয়েন্টিফোর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জকোভিচ তার ছেলে স্তেফান (১০) এবং মেয়ে তারা (৮)-কে ভর্তি করিয়েছেন এথেন্সের সেন্ট লরেন্স কলেজে, যা একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট স্কুল। এর পর থেকেই তার পরিবার গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কয়েক দিন আগে জকোভিচকে দেখা গেছে এথেন্সের কাভুরি টেনিস ক্লাবে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে অনুশীলন করতে।
তবে এখনো সন্তানদের জন্য কোনো টেনিস ক্লাব নির্ধারণ করেননি তিনি। শোনা যাচ্ছে, কাভুরি বা এথেন্স রিভিয়ারার ৯১ নম্বর টেনিস ক্লাবে ভর্তি করানোর কথা ভাবছেন। শুধু পরিবার নয়, জকোভিচের পেশাগত দায়িত্বও ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে সার্বিয়া থেকে। সম্প্রতি বেলগ্রেড থেকে এথেন্সে সরানো হয়েছে একটি এটিপি ২৫০ টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন জকোভিচ ও তার ভাই। আগামী নভেম্বর থেকে এটি অনুষ্ঠিত হবে নতুন নামে—‘হেলেনিক চ্যাম্পিয়নশিপ’। জকোভিচ ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন, তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।
সম্প্রতি জোকোভিচ একাধিকবার দেখা করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে। যদিও উভয় পক্ষই সাক্ষাৎকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করছে, তবু গুঞ্জন থামেনি। অনেকের মতে, নতুন ঠিকানা হিসেবে গ্রিসকেই বেছে নিতে চলেছেন এই তারকা।