যে সব কারনে ‘লাইক-শেয়ার’ দিলেও হতে পারে জেল

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্টে না জেনে বা আবেগের বশবর্তী হয়ে ‘লাইক’ বা ‘শেয়ার’ দেওয়াও এখন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায়ে ইতালির সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, ইহুদি বিদ্বেষ, নাজিবাদ সমর্থন কিংবা হলোকাস্ট অস্বীকারকারী কোনো পোস্টে লাইক দেওয়া বা শেয়ার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

ইতালির স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ইলসোলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্রবাদী লেখা শেয়ার করায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা বহাল রেখেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এ ধরনের অনলাইন কার্যক্রম সমাজে ঘৃণা ছড়ানোর হুমকি তৈরি করে এবং আইনের চোখে তা কোনোভাবেই তুচ্ছ বিষয় নয়।

আদালত রায়ে উল্লেখ করে, ডিজিটাল রিঅ্যাকশন বা ‘এনগেজমেন্ট’ কোনো ‘সামান্য আচরণ’ নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমিক প্রভাবে এসব বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সমাজে উত্তেজনা, বিভাজন ও সহিংসতার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের আনুষ্ঠানিক সদস্য না হলেও, তার অনলাইন আচরণ যদি সেই সংগঠন বা মতাদর্শকে প্রচার, সমর্থন বা শক্তিশালী করে, তবে তাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

আদালতের মতে, ডিজিটাল যুগে ‘এনগেজমেন্ট’ই হলো বার্তা ছড়িয়ে পড়ার প্রধান চালিকাশক্তি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার বা লাইক দেওয়ার মাধ্যমে কেউ যদি বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা ‘পুনঃপ্রচার’ করেন, তবে সেটির দায়ও ওই ব্যক্তির ওপর বর্তাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়টি শুধু ইতালির জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা। ডিজিটাল জগতে কিছু ক্লিকের মাধ্যমেই একটি পোস্ট লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

আইনজীবীরা সতর্ক করে বলেন, আবেগে বা না বুঝে দেওয়া লাইক, বন্ধুর অনুরোধে শেয়ার কিংবা ‘মজা করে’ দেওয়া কোনো রিঅ্যাকশনও ব্যবহারকারীকে আইনি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যদি কনটেন্টটি বিদ্বেষমূলক হয়। সোশ্যাল মিডিয়া এখন আর কেবল বিনোদনের জায়গা নয়, এটি আইনের আওতাভুক্ত একটি জনপরিসর। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা ও আইনগত সচেতনতার যুগে প্রতিটি ক্লিকই এখন দায়িত্বের অংশ।