হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জরুরি সতর্ক বার্তা

বিশ্বজুড়ে ফাঁস হয়ে গেছে ৩৫০ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী ফোন নাম্বার ও প্রোফাইল ছবি! অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ও এসবিএ রিসার্চের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, অ্যাপটির একটি গুরুতর দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গোপনে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে থাকা সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এই ত্রুটির কারণে হোয়াটসঅ্যাপের সব ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা। ডেইলি মেইল 

গবেষকদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁক রয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে যে হঠাৎ কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু যে ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন, মেটার কোনও গোলযোগ রয়েছে। অ্যাপের গোলযোগের জন্যই ব্যবহারকারীদের ফোন নাম্বার ও প্রোফাইল ছবি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্যই সারা বিশ্বের প্রায় সব ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। 

হোয়াটসঅ্যাপে সন্ধান পাওয়া কারিগরি ত্রুটিটির বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান গ্যাব্রিয়েল গেগেনহুবার বলেন, ‘একটি উৎস থেকে এত বড় সংখ্যক অনুরোধ গ্রহণ করা স্বাভাবিক নয়। এই অস্বাভাবিক আচরণই ত্রুটিটি প্রকাশ করেছে এবং আমাদের প্রায় অসীম সংখ্যক অনুরোধ পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে।’ গবেষক দলের সদস্য আলইওশা ইউডমায়ার বলেন, ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি বার্তার বিষয়বস্তু সুরক্ষিত রাখে, কিন্তু মেটাডেটা সব সময় সুরক্ষিত থাকে না। বিপুল পরিমাণ মেটাডেটা বিশ্লেষণ করলেই গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমাদের গবেষণা এটা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে।’

গবেষকদের কাছ থেকে জানার পর মেটার পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিল। তবে এখন সেই ত্রুটি দূর করা সম্ভব হয়েছে। মেটার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে কোনও ফোন নাম্বার আছে কি না, সে বিষয়ে কতবার খোঁজ নেওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য খরচও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। 

একইসঙ্গে মেটার দাবি, সব হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরই ফোন নাম্বার ও প্রোফাইল ছবি প্রকাশ্যে আছে। ফলে সেগুলি ফাঁস হয়েছে, এমন কথা বলা যাবে না। কিন্তু সবারই হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার ও প্রোফাইলের ছবি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির কাছে থাকে। অনাকাঙ্খিত কারও কাছে ফোন নাম্বার থাকুক, তা কেউই চান না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহসভাপতি নীতীন গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘বাগ বাউন্টি কর্মসূচির আওতায় গবেষকেরা দায়িত্বশীলভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের দেখানো নতুন কৌশল আমাদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে কিছু তথ্য স্ক্র্যাপ করতে সহায়তা করেছে। আমরা যে অ্যান্টি–স্ক্র্যাপিং ব্যবস্থা চালু করেছি, এই গবেষণা তা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ত্রুটির কারণে ব্যবহারকারীদের আদান–প্রদান করা বার্তায় ব্যবহৃত এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ইন্টারফেস ব্যবহার করে প্রতি ঘণ্টায় কয়েক কোটি ফোন নাম্বার পেয়ে গিয়েছেন। মোট হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশের অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। প্রোফাইলের ছবি পাওয়া গিয়েছে। ২৯ শতাংশ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর চ্যাটও দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এরপরেও মেটা দাবি করছে তথ্য ফাঁস হয়নি।