মাল্টি-ফোল্ডিং ফোন আনলো স্যামসাং

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস তাদের প্রথম মাল্টি–ফোল্ডিং (ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন) স্মার্টফোন গ্যালাক্সি জেড ট্রাইফোল্ড উন্মোচন করেছে। 

মঙ্গলবার সিউলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই প্রথম মাল্টি-ফোল্ডিং স্মার্টফোনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি।

চীনা ব্র্যান্ডগুলোর দ্রুত অগ্রগতির মধ্যে স্যামসাংয়ের এই নতুন উদ্যোগকে বিশ্লেষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তবে দাম ও উৎপাদনব্যয় বেশি হওয়ায় ভাঁজযোগ্য ফোনের বাজার এখনো সীমিতই থাকবে বলে মত তাদের।

স্যামসাংয়ের নতুন গ্যালাক্সি জেড ট্রাইফোল্ডের দাম প্রায় ৩.৫৯ মিলিয়ন ওন (প্রায় ২,৪৪০ মার্কিন ডলার)। তিনটি পৃথক প্যানেল দিয়ে খুলে ফোনটি হয়ে যায় ১০ ইঞ্চির বড় একটি ডিসপ্লে। আকারে এটি স্যামসাংয়ের সর্বশেষ ফোল্ড মডেল গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ বড়।

স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স লিম বলেন, “ফোল্ডেবল বাজার বাড়তেই থাকবে। বিশেষ করে ট্রাইফোল্ড এই বাজারকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করতে পারে। তবে এই ডিভাইসটি ভলিউম বাড়ানোর জন্য নয়। বরং যারা বিশেষভাবে এমন ডিভাইস চান, তাদের কথা ভেবেই তৈরি।”

দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি ডিভাইসটি ১২ ডিসেম্বর স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু হবে। এরপর চলতি বছরের মধ্যেই চীন, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাওয়া যাবে ফোনটি। যুক্তরাষ্ট্রে এর আত্মপ্রকাশ হতে পারে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে।

ফোনটিতে স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের সবচেয়ে বড় ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সুপারফাস্ট চার্জিং সুবিধা। যা মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০ শতাংশ চার্জ দিতে সক্ষম। তবে লিম জানান, মেমোরি চিপসহ বিভিন্ন উপাদানের দাম বাড়ায় ফোনটির মূল্য নির্ধারণ করা ছিল “কঠিন সিদ্ধান্ত”।

বিশ্লেষকদের মত, ট্রাইফোল্ড স্যামসাংয়ের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শনের মার্জিত উদাহরণ হলেও এটি আপাতত বড় পরিসরে বিক্রি বাড়াবে না। এনএইচ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ–এর বিশ্লেষক রিউ ইয়ং-হো বলেন, “এটি প্রথম প্রজন্মের পণ্য। এখনই স্যামসাং বড় অংকের বিক্রি প্রত্যাশা করবে না। টেকসই ও পূর্ণাঙ্গতার বিষয়টি বাজার কেমন গ্রহণ করে, সেটিই দেখতে হবে।”

এদিকে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হচ্ছে। গত বছরই চীনের হুয়াওয়ে বাজারে আনে প্রথম তিনভাগে ভাঁজ করা যায় এমন ফোন। আবার অ্যাপলও আগামী বছর তাদের প্রথম ফোল্ডেবল ডিভাইস আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর রয়েছে।

তবে দাম ও উৎপাদন–সীমাবদ্ধতা বাজার সম্প্রসারণে বড় বাধা হয়ে আছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে মোট স্মার্টফোন বাজারের ২ শতাংশেরও কম হবে ফোল্ডেবল ফোন। ২০২৭ সালেও তা ৩ শতাংশের নিচেই থাকতে পারে।

স্যামসাংয়ের দিক থেকে অবশ্য আশাব্যঞ্জক তথ্য রয়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ফোল্ডেবল বাজারে তাদের শিপমেন্ট শেয়ার একলাফে ৬৪ শতাংশে পৌঁছে গেছে। যা আগের প্রান্তিকে ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। নতুন মডেল উন্মোচনের সময়সীমার কারণে এই উত্থান-পাতন ঘটছে।