ইউসিবিতে একীভূত হচ্ছে ৪০ বছরের পুরাতন ন্যাশনাল ব্যাংক

ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মে ধুঁকছে দেশের ৪০ বছরের পুরাতন বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক। সংকটে থাকা ব্যাংকটিকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ইউসিবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ডেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ বিষয়ে ইউসিবি ব্যাংকের পর্ষদের একজন সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন । বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের বরাত দিয়ে এ বিষয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই ইউসিবিকে ব্যাংকটি একীভূত করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ব্যাংকটিতে নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালকেরা চান, এটিকে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে। তবে শেয়ারধারী পরিচালকেরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা যায় কি না, তা দেখতে চান। এ নিয়ে ব্যাংকটির পর্ষদ দ্বিধাবিভক্ত।

এ বিষয়ে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আলোচনা করছে ব্যাংকগুলো। বিচার-বিশ্লেষণ করছে তারা। এখনও চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকে পদ্মা, সোনালীতে বিডিবিএল এবং সিটি ব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এসব খবরের মধ্যে ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত করার উদ্যোগের খবর এলো।

১৯৮৩ সালে ১৮ উদ্যোক্তা পরিচালক শুরু করেন ন্যাশনাল ব্যাংক, যাদের মধ্যে ছিলেন একেএম আবু তাহের, আবু তাহের মিয়া, জয়নুল হক সিকদার, খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন।

এরপর ২০০৯ সালে পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক বদলের মাধ্যমে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে। এরপর একে একে অন্য পরিবারের পরিচালকরা পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন। জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা পর্ষদে আসেন।

এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান জয়নুল হক সিকদার। তার পর তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন গত ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এক বছর পর ২০২২ সালের অগাস্টে পর্ষদ থেকে সরে যেতে হয় উদ্যোক্তা পরিচালক ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন। একই পরিবারের মাবরুর হোসেনও বাদ পড়েন। এর মাধ্যমে ব্যাংকটিতে সিকদার পরিবারের কর্তৃত্ব আরও নিরঙ্কুশ হয়। এ পরিবারের বাইরে পরিচালক হিসেবে তখন ছিলেন উদ্যোক্তা পরচিালকদের মধ্যে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক ও পারিবারিক ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও কন্যা পারভীন হক সিকদার। সন্তানদের বিবাদ সামাল দিতে অনেকটা ব্যর্থ হন মনোয়ারা হক সিকদার। পারিবারিক দ্বন্দের প্রভাব পড়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের উপরও। পরিচালক পর্ষদে সিকদার পরিবারের চার পরিচালক থাকায় বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠে।

এরমধ্যে ঋণ নিয়ে অনিয়ম এবং সিকদার পরিবারের সদস্য পরিচালকদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় দেড়শত কোটি টাকার অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হয়।