পণ্য খালাসের জায়গার স্বল্পতার কারণে কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা যাত্রাবাড়ী আসতে রাজি হচ্ছেন না।
কাওরানবাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তরে বড় বাধা পণ্য নামানোর জায়গার স্বল্পতা। এখন পর্যন্ত যে জায়গা খালি করা হয়েছে সেখানে বড় জোর ৩০-৫০টি গাড়ি থেকে পণ্য নামানো যাবে। বাকি ৩০০’র মতো ট্রাককে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এতে আশেপাশের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে কাওরানবাজার কাঁচামালের আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমন চৌধুরি বলেন, এ অবস্থায় যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার স্থানান্তরে আগ্রহী নয় কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২০জুন) দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মো. সাইফুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে ৮৯৫জন ব্যবসায়ীকে কাওরান বাজার থেকে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে স্থানান্তরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমরা কয়েকটি বৈঠক করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি।
আজ (বৃহস্পতিবার) উচ্ছেদ অভিযানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ম্যাজিস্ট্রেট এসেছেন। কিন্তু আমাদের যে জায়গা দেওয়ার কথা ছিল বাস্তবে তা নেই। দোকানের জায়গা খালি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা গাড়ি থেকে পণ্য খালাস করা। প্রতিদিন রাতে ৩৫০টি ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর মতো জায়গা এখানে নেই। যে রাস্তা সিটি করপোরেশন থেকে দেখানো হচ্ছে সেখানে বড় জোর ৩০-৫০টি গাড়ি আনলোড করার সুযোগ আছে। বাকি ট্রাকগুলোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যদি রাস্তায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে পুরো এলাকায় যানজট তৈরি হয়ে যাবে। ঢাকার মধ্যে কোনো গাড়ি ঢুকতে পারবে না। এই রাস্তায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় চল্লিশটি জেলার গাড়ি যাতায়াত করে। ফলে এই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় জ্যামে আটকে অনেক সবজিবাহী ট্রাকের পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই অবস্থায় আমরা যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে আসবো না।
সাইফুর রহমান আরো বলেন, ভিতরে আমাদের জন্য সিটি করপোরেশেন থেকে যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে তা খালি করে দিলে আমাদের আসাতে সমস্যা নেই। কিন্তু শুধু দোকানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা নিয়ে আসা যাবে না। আমাদের মূল সমস্যা আনলোডিং। ৩০মিনিট ব্যবধানে সবজির বাজারে অনেক উত্থান পতন হয়। সঠিক সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারলে অনেক লস দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হতে পারে। এমনকি পণ্য বিক্রিও না হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে কোনো ব্যবসায়ী এ ঝুঁকি নিবে না।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হয়নি। যারা অবৈধভাবে এতোদিন ব্যবসা পরিচালনা করেছেন নিজ থেকে সরে গিয়েছেন। কাওরানবাজার ব্যবসায়ীদের দাবিকৃত রাস্তার জায়গা খালি করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এসেছি দুই পক্ষের কথা শুনেছি। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছে, কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা এখানে আসলে উনাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা ছেড়ে দেয়া হবে। আর ওনারা বলছেন জায়গা বুঝে পাওয়ার পর এখানে আসবেন। বিষয়টি আলোচনা করে সমাধন বের করা যাবে। তবে ৩৫০টি ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর মতো জায়গা এখানে আছে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
এ সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার মাসুম মোল্লা বলেন, আপনারা আমাদের কাছে বলেছেন, শুনেছি, কিন্তু আমাদের কথা এখনকার ব্যবসায়ীরা শুনবে না। সিটি করপোরেশন থেকে যদি কোনো নির্দেশনা আসে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
উল্লেখ্য বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে ১৭৬টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যাত্রাবাড়িতে। এর মধ্যে ৬৩টি দোকান প্রাথমিকভাবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সর্বমোট ৮৯৫ জন ব্যবসায়ী কাওরান বাজার থেকে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে স্থানান্তর হবে।