এক দশক ধরে যশোর চেম্বার অব কমার্সের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীদের রশি টানাটানি চলছে। ফলে দীর্ঘদিন নির্বাচিত অভিভাবক শূন্য প্রতিষ্ঠানটি।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর চেম্বারের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট হবে। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনের এই আয়োজন ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দিন চেম্বারের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীরা। এ কারণে বারবার নির্বাচন ভেস্তে গেছে। নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় তাই ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীরা এ ঘোষণায় কিছুটা নাখোশ। কারণ গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তাদের বড় অংশই আত্মগোপনে রয়েছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে। ২৬ অক্টোবর জমা দিতে হবে মনোনয়নপত্র। আর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৯ নভেম্বর। এরপর ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোট।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ৭ সেপ্টেম্বর আপিল ও নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চেম্বারের প্রশাসক ও যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন স্বাক্ষরিত এক পত্রে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদারকে আপিল বোর্ডের আহ্বায়ক করা হয়। আর জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেনকে করা হয়েছে নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক।
এক দশক ধরে যশোর চেম্বারের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসক দিয়েই চলছে এই চেম্বারের কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বারবার হস্তক্ষেপ করে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রভাবে এত দিন যশোর চেম্বার অভিভাবকশূন্য ছিল। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর চেম্বারের ভোট নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেন বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আইনশৃঙ্খলা ঠিক নেই। আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারব কি না, তা জানি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতো।’
এদিকে ২৭ আগস্ট যশোর চেম্বারের প্রশাসকের মেয়াদ আরও চার মাস বাড়ানো হয়। বাড়তি এই মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে প্রশাসককে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর চেম্বারের নির্বাচনের জন্য অনেক আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সেই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক প্রভাব ও আদালতে মামলা থাকার কারণে একযুগ ধরে যশোর চেম্বারের নির্বাচন হয় না। ১০ বছর ধরে প্রশাসক দিয়ে চলছে বাণিজ্য সংগঠনটির কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল এই চেম্বারের নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়ী হয়। ২০১২ সালের ৩ মার্চ মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব নেয়। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, ওই বছরের ১২ জুলাই ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও চেম্বারের প্রশাসক এসএম শাহীন বলেন, ৩০ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।