ট্রাম্পের শুল্ক নীতি

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নীতির প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উপর চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করলেও পরে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে বর্তমানে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বহাল রয়েছে, যা রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।  

২ এপ্রিল ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত শুল্কের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়ে আশ্বাস দেন যে, বাংলাদেশ মার্কিন সুতা ও অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়াবে। এতে দুই দেশের মধ্যকার ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ এর বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যার সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকায় পোশাক শিল্পের মুনাফা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই শুল্ক বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।  

সাভারের এ৪ ইয়ার্ন ডায়িং কোম্পানির শ্রমিক মুর্শিদা আক্তারের মতো লক্ষাধিক কর্মীর চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তিনি বলেন, শুল্ক বাড়লে অর্ডার কমে যাবে, তখন আমাদের কাজও কমবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করার চেষ্টা। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ছিল, এখন ট্রাম্পের শুল্ক সেই সংকটকে আরও তীব্র করবে। 

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমএফের চাপে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোসহ নীতিগত সংস্কারের দাবি উঠেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ইতোমধ্যে চাপ বাড়ছে, শুল্ক এই সংকটকে আরও গভীর করবে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। বর্তমানে দেশের ২৩০টি কারখানা LEED (Leadership in Energy and Environmental Design) সনদ পেয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এ৪ ইয়ার্ন ডায়িংয়ের মতো কারখানাগুলো উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন করে ইউরোপ ও মার্কিন বাজারে রপ্তানি করছে।  

তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক চাহিদা কমার কারণে এই খাত এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে। এ৪ ইয়ার্নের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার ইমাম বলেন, গত বছর কারখানায় হামলা হওয়া সত্ত্বেও আমরা উৎপাদন চালু রেখেছি। কিন্তু শুল্ক বাড়লে আমাদের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্পকে রক্ষায় সরকার ও শিল্প মালিকদের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। টেকসই উন্নয়ন ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চাপ তৈরি করলেও, শিল্প খাতের অভিযোজন ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাবনা রয়ে গেছে।