নিত্যদিনের প্রতিবেলার রান্নার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ কাঁচা মরিচ। মরিচ ছাড়া রান্না করার কোনো বিকল্প এখনো জানা নেই। নানা কারণে এই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে থাকে। কখনো কখনো দাম কমেও যায়। দাম বাড়লে গৃহিণীরা এমনিতে কাঁচা মরিচের ব্যবহার সীমিত করেন। তবে দাম কমলে বেশি খাওয়ার মতো নিত্যপণ্য কাঁচা মরিচ নয়।
বৃষ্টিবাদল কিংবা বেশি রোদ উঠলে অথবা মরিচ তোলার মতো শ্রমিক পাওয়া না গেলে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেলেও কাঁচা মরিচের দাম বাড়িয়ে দেন চাষিরা। অন্যান্য শুকনো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ থাকলেও কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। সে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
খবর সংযোগের মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আগের দিনের তুলনায় শুক্রবার প্রতি কেজিতে ৫০-৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০-২২০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে। পাইকারিতে ২০০ টাকা কেজি হলেও স্থানীয় বাজারে খুচরা পর্যায়ে ২৫০-২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা মরিচের বাজার হচ্ছে গাংনী কাঁচাবাজার।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে বাজারে মরিচের দর বাড়তে শুরু করে। শুরুতে প্রতি কেজি ১৭০-১৯০ টাকায় কেনাবেচা হলেও বিকেল পর্যন্ত তা ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে মেহেরপুর জেলার কৃষকদের উৎপাদিত এই কাঁচা মরিচ।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে মরিচের ফুল-ফল কমে গেছে। তাছাড়া বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে অনেক ক্ষেত। ফলে প্রতিদিনই মরিচের সরবরাহ কমছে। সে কারণে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তির দিকে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানান তারা।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে পেঁয়াজের দামে মিলেছে স্বস্তির ছোঁয়া। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা কমে এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
শুক্রবার কাওরান বাজার, মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা, বনশ্রী ও নতুনবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে এবং দামও স্থিতিশীল।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মাহবুব মোল্লা জানান, পেঁয়াজ আমদানির গতি স্বাভাবিক হওয়ায় ও স্থানীয় বাজারে মজুত বৃদ্ধি পাওয়ায় দামে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, কাওরান বাজারে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মণ ২৮০০ টাকা। তবে ভালো-মন্দ হওয়ায় এই মূল্য কমবেশি রয়েছে।
এ সময় সুমন নামের অপর এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় আমদানি কমে যায়। যে কারণে পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়েছে।
বিল্লাল নামের একজন ক্রেতা জানান, ‘গত সপ্তাহে ৯০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছিল, আজ ৬৮ টাকায় পাচ্ছি—এটা অনেকটাই স্বস্তির। বিক্রেতাদের ভাষ্য, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম আরও কিছুটা কমতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে স্থানীয় বাজারের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ে যাই। কারণ স্থানীয় ক্রেতাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত ব্যবসা করি। হঠাৎ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।
সুমনা শিকদার নামের এক সাধারণ ক্রেতা বলেন, আমাদের সংসার চালানোর জন্য মাসিক বাজেট থাকে। এ সময় কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক দুর্ভোগ্ পোহাতে হয়। তবে পেঁয়াজের দাম কমে আসায় আমরা খুশি। কিন্তু এই খুশি যেন সাময়িক না হয়।
মনির নামের এক ক্রেতা বলেন, সব সমস্যা আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের। কেননা আমাদের প্রতিদিন বাজার করতে হয়। আমরা অর্থের অভাবে বেশি করে ক্রয় করতে পারি না। তবে হঠাৎ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের বড় ধরনের বিপদে পড়তে হয়। তিনি বলেন, আজ পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০-১৫ টাকা কমে গেছে কেজিপ্রতি।
রাজধানীর ক্রেতারা আশা করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে অন্তত নিত্যপণ্যের বাজারে একটুখানি হলেও স্বস্তি ফিরবে।
পেঁয়াজের দামের ওঠা-নামা নিয়ে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে সরবরাহ ব্যবস্থাকে সচল রাখা এবং মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নইলে সাময়িক স্বস্তির পর আবারও দাম বাড়তে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অযুক্তিক পণ্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করা যাবে।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৮ মাস পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারত থেকে চারটি ট্রাকে ১০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বন্দরে প্রবেশ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম।
তিনি জানান, প্রায় ৮ মাস আগে ভারত সরকার সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে দীর্ঘ ৮ মাস পরে ভারত থেকে চারটি গাড়িতে ১০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এসেছে।
এর আগে, ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মঙ্গলবার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।