ঈদ-পরবর্তী সময়ে আবারও ব্যাংক খাতে ফিরতে শুরু করেছে নগদ অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, শুধু জুলাই মাসেই মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থ থেকে প্রায় ৯ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। এতে তারল্য সংকট পেরিয়ে ব্যাংকে অর্থপ্রবাহে ফিরেছে ইতিবাচক গতি।
গত মে ও জুন মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়ে গিয়েছিল। কোরবানির ঈদে পশু কেনা, বাজার খরচ, এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে অনেকেই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নেন। তবে ঈদের পর সেই প্রবণতা আবার উল্টো দিকে ঘুরেছে।
জুলাই শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। এক মাসে কমেছে ৯ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।
নগদ অর্থ ব্যাংকে ফেরার পাশাপাশি আমানত বৃদ্ধির প্রবণতাও স্পষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী-
মার্চ ২০২৫ শেষে: আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
জুন ২০২৫ শেষে: বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।
তিন মাসে প্রবৃদ্ধি: প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
এর আগের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এই প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বাজারে চলমান রিজার্ভ মানি বা ছাপানো টাকার পরিমাণও কমেছে-
জুনে: ৫ লাখ ১ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা
জুলাইয়ে: ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা
হ্রাস: প্রায় ১৫ হাজার ৮২১ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ
এই প্রবণতা নতুন নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংক খাতে আস্থা সংকট শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠছে। ঈদ ও উৎসবকেন্দ্রিক সাময়িক নগদ চাহিদা থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার তা ব্যাংকে ফিরে আসছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, জনগণের ব্যাংকমুখী হওয়া ব্যাংক খাতের জন্য একটি আস্থার ইঙ্গিত। তারল্য সংকট মোকাবিলা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য এটি ইতিবাচক সিগন্যাল হতে পারে।