এক অদ্ভুত মায়ার দেশ নেপাল। হিমালয় কন্যা নামেই তার পরিচিতি। বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয় দেশটি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুরা যান সেখানে। আমাদের দেশ থেকেও প্রতি বছর অনেক মানুষ নেপাল ভ্রমণে যান। যারা দেশটিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য তুলে ধরছি নেপালের দর্শনীয় ৫টি স্থান সম্পর্কে-
১. সিন্ধুলিগাধি
সিন্ধুলিগাধি নেপালের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান। এটি সেই প্রাচীন দুর্গ যেখানে ১৭৬৭ সালে গুর্খা সৈন্যরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সৈন্যদের পরাজিত করেছিল। দুর্গটি আজও নেপালি সৈন্যদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪১৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ঐতিহাসিক দুর্গটি।
সিন্ধুলিগাধিতে সারা সপ্তাহ ধরে পিকনিক ও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। দুর্গটি নেপালের একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠেছে। সিন্ধুলি থেকে দক্ষিণে রামেছাপ ও উত্তরে হিমালয় দেখা যায়। সিন্ধুলিগাপধিতে নেপাল সেনাবাহিনীর তৈরি জাদুঘরটি আকর্ষণ করে পর্যটকদের। অনেকে সেখানকার বিখ্যাত জুনার ও কিউই ফল খেতেও যান।
২. মুন্ডুম ট্রেক
মুন্ডুম ট্রেক নেপালের খোটাং ও ভোজপুর জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানটি সিলচুং পিকের ভিউপয়েন্ট পর্যন্ত অর্থাৎ ৪ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি মূলত একটি ট্রেইল। যেটি ধরে এগিয়ে গেলে ডিকটেল বাজার থেকে শুরু করে চাখেওয়া, রাওয়া ধাপ, সালপা ভাঞ্জিয়াং, শিলচুং, হাঁসপোখারির মতো সুন্দর এলাকাগুলো পার হয়ে ভোজপুরে পৌঁছানো যায়।
ডিকটেল ও ভোজপুরে কিছু লজ আছে, তবে ট্রেকারদের তাদের নিজস্ব তাঁবু বহন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ট্রেইলটিতে একসঙ্গে ৮০০০ মানুষ এভারেস্ট, লোটসে, মাকালু, চো ওয়ু ও কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। বসন্ত ঋতু অর্থাৎ মার্চ থেকে মে সেখানে ভ্রমণের জন্য সেরা সময়।
৩. বরাহ ক্ষেত্র
বরাহ ক্ষেত্র হলো একটি তীর্থস্থান। যা নেপালের ধরন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সপ্ত কোশি ও কোকা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। ব্রহ্ম পুরাণ, বরাহ পুরাণ ও স্কন্দ পুরাণসহ পুরাণে উল্লিখিত নেপালের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে একটির অবস্থান বরাহ ক্ষেত্রে। এটি মহাভারত মহাকাব্যেও উল্লেখিত আছে।
এটি পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক উভয় ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারত থেকে লোকেরা এখানে আসেন। নেপালবাসীরা মকর সংক্রান্তির শুভ দিনে এই তীর্থস্থানে আসেন। জেট বোট পরিষেবা ও পাবলিক বাসের সুবিধা বরাহ ক্ষেত্রে সহজেই মেলে।
৪. অরুণ ভ্যালি
অরুণ ভ্যালি সাগরমাথা ও মাকালুর মধ্যে মাকালু-বরুন জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এটি একটি বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। যেখানে অত্যাশ্চর্য টেরেসড ল্যান্ডস্কেপসহ মরুভূমির দেখা পাবেন। যদিও স্থানটি পর্যটনবহুল নয়। কারণ এটি একটি ব্যতিক্রমী রুট, যা ট্রেকাররা আবিষ্কার করেছিলেন।
কাঠমান্ডু থেকে এক ঘণ্টার ফ্লাইটের পর তুমলিংটারে ট্রেক শুরু হয়। অরুন ভ্যালির পথে চলতে চলতে দেখা মিলবে রাই, শেরপা ও লিম্বু সম্প্রদায়ের বসতি। এটি একটি আশ্চর্যজনক ট্রেকিং অভিজ্ঞতা দেয়।
৫. লো মানথাং
লো মানথাং হলো নেপালের একটি প্রাচীর ঘেরা শহর। যা ৪০০০ মিটার উচ্চতায় উত্তর মধ্য নেপালের মুস্তাংয়ে অবস্থিত। এই স্থানে সবসময়ই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে উঁচু এ স্থানে যেতে হলে ভ্রমণকারীদের একটি বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।
১৫ শতকে নির্মিত প্রাচীরঘেরা এই শহরের মধ্যে একটি মঠও আছে। এতে অমূল্য প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও বুদ্ধের মূর্তি আছে। কাগবেনির উত্তরে অবস্থিত আপার মুস্তাং ভ্রমণের জন্য বিদেশিদের অনুমতির প্রয়োজন হয়।