চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ডোমখালী সমুদ্রসৈকত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় আবিষ্কার। এখানে সমুদ্রের অবিরাম গর্জন, মিষ্টি দখিনা হাওয়া, সবুজের অপরূপ সমারোহ এবং লাল কাঁকড়াদের লুকোচুরি মিলে তৈরি হয়েছে এক অনন্য প্রাকৃতিক মেলবন্ধন। সৈকতের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সড়ক থেকে পূর্ব দিকে তাকালেই চোখে পড়বে ফসলের মাঠে ব্যস্ত কৃষকদের নিবিষ্টতা, আর সন্ধ্যায় রাখালদের গরু-মহিষের পাল নিয়ে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য—যেন গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপের এক জীবন্ত ছবি।
প্রকৃতির কোলে এই সৈকতের চারপাশ জুড়ে সবুজের রাজত্ব। সড়কের দুপাশে সারি সারি খেজুর, নারকেল, তাল, সেগুন, আকাশমণির মতো গাছের সমারোহ, আর দক্ষিণে লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন কেওড়া, বাইন, সুন্দরী গাছের ঘন বন। শীতকালে এখানকার খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করতে দেখা যায় স্থানীয়দের, যা এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত।
সৈকতের উত্তরে দৃষ্টিনন্দন বালুময় বিস্তার, আর পশ্চিমে ম্যানগ্রোভ বনের হৃদয়জুড়ে থাকা জীববৈচিত্র্য। এই বনে বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ, লজ্জাবতী বানর, মেছো বাঘ, হরিণ থেকে শুরু করে নানা পাখির কলতান প্রকৃতিকে করে তোলে প্রাণবন্ত। ভোরে কিংবা সন্ধ্যায় বনের পাশে হরিণের দলের অবাধ বিচরণ, আর বনের ভেতর মহিষের পালের চারণদৃশ্য মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণীদের নিবিড় সম্পর্ক।
জোয়ার-ভাটার খেলায় মজে থাকা এই সৈকতের কাদামাটিতে ভাটার সময় দেখা মেলে লাল কাঁকড়া আর নানা সামুদ্রিক প্রাণীর। মানুষের পদচিহ্ন পেলেই তারা গর্তে মুখ লুকায়—এ যেন প্রকৃতির নিজস্ব খেলাঘর। এখানকার বাতাস, জল, সবুজ আর প্রাণের সম্মিলনে ডোমখালী শুধু একটি সৈকত নয়, বরং প্রকৃতির গভীরতা অনুভবের এক অনবদ্য ক্ষেত্র।
কীভাবে যাবেন?
মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নে ডোমখালীর অবস্থান। চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরত্ব। স্থানীয় পরিবহন বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সহজেই যাওয়া যায়।
মনে রাখুন:
প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন, বন্যপ্রাণীদের শান্তিতে থাকতে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করুন।