ঝরনা ও পাহাড় ভ্রমণে যেসব বিষয়ে সতর্ক হবেন

ঝরনা ও পাহাড়ে ভ্রমণে গেলে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে সমতলের মানুষের জন্য তো বটেই। কিছু প্রস্তুতি না থাকলে বেশ কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। এমনকি প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে যেকোন সময়। তাই ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে হবে ভ্রমণের আগেই। ঝরনা কিংবা পাহাড়ে যাওয়ার আগেই জেনে নিন প্রস্তুতি এবং করণীয় সম্বন্ধে—

যাওয়ার আগে কী করবেন

ভ্রমণে যাওয়ার দু’একদিন আগে থেকে সিঁড়িতে ওঠা-নামার অনুশীলন করতে পারেন। এমনকি নখ কেটে ফেলুন। দু’হাত মুক্ত থাকে এ রকম ব্যাগ নেবেন। পোশাক যথাসম্ভব কম নেবেন। মশা নিরোধক সঙ্গে রাখা এবং ব্যবহার করা ভালো। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ খেয়ে নেওয়া উত্তম। স্টাইলিশ না হলেও গামছা খুব কাজের। এটি আসলেই ট্রেকারদের ব্র্যান্ড। প্রয়োজনীয় ওষুধ, ফার্স্টএইড এবং গ্লুকোজ নেওয়া জরুরি।

অভিজ্ঞ গাইড নিন

ঝরনা বা পাহাড়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড নেবেন। যে কোনো ঝরনার প্রবেশপথে টিকিট কাউন্টারে ইজারাদার ও বন বিভাগ অনুমোদিত গাইড পেয়ে যাবেন। খরচের বিষয়ে কথা বলে নেবেন। তারাই পাহাড়ি পথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে সাহায্য করবেন, ঝরনায় নিরাপদে চলতে পরামর্শ দেবেন।

গভীর কূপ সম্পর্কে জানুন

দেশের বেশিরভাগ ঝরনাগুলোয় এক বা একাধিক কূপ আছে। এসব কূপ কলসি আকৃতির। ওপরে ছোট মুখ আর ভেতরটা বড় ও গভীর। এসব কূপে কোনোভাবেই নামবেন না।

সাঁতার জানা জরুরি

ঝরনার নিচের অগভীর কূপগুলো অনেকটাই নিরাপদ। ঝরনার জলে ভিজে আনন্দ করেন পর্যটকেরা। তবে বিপদ এড়াতে সাঁতার না জানলে এসব অগভীর কূপেও নামবেন না।

ঢাল বেয়ে উঠবেন না

পাহাড়ি ঝরনার ঢালগুলো পিচ্ছিল হয়। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকেরা এসব ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। সামন্য ভুলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই ঝরনার খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না।

অতিবৃষ্টিতে করণীয়

পাহাড় ও ঝরনায় যাওয়ার পথ উঁচু-নিচু। অতিবৃষ্টির সময় এসব পথ খুব পিচ্ছিল হয়। ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঝরনা ভ্রমণ খুব বিপজ্জনক। তাই অতিবৃষ্টির সময় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো।

নিরাপদ অবস্থান

স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ঝরনা এলাকায় যাওয়ার পর অনেক সময় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এতে ছড়া ও ঝিরিতে হড়কা বানের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তীব্র স্রোতের মধ্যে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমন অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে অবস্থান নিতে পারেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে কল করে সাহায্য চাইবেন।

জুতসই জুতা

পাহাড় ও ঝরনায় ভ্রমণে গেলে পানি ও পাথুরে পথে হাঁটার উপযোগী জুতা পরবেন। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে পারবেন। পায়ের জন্য নী-ক্যাপ, অ্যাংকলেট, গ্রিপওয়ালা, স্লিংব্যাক জুতা খুব কাজের। পেছনে খোলা জুতা না হলে ভালো।

ছবি তোলায় সতর্কতা

ঝরনার খাড়া ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেকের মধ্যে ছবি তোলার প্রবণতা আছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান অনেকে। এতে দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়। তাই ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যাবেন না।

দূরত্ব মেনে চলুন

পাহাড় বা ঝরনা দেখতে গিয়ে কূপে নেমে পড়া, ঢালে বা ছড়ায় হাঁটাহাঁটি ও সেলফি তোলা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকেও ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথও এড়িয়ে চলতে হবে।

নির্দেশনা মেনে চলুন

পাহাড় বা ঝরনা এলাকায় পর্যটকদের করণীয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া থাকে। বন বিভাগ ও ইজারাদারদের দেওয়া এসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তাহলেই দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদ ভ্রমণ সম্ভব হতে পারে।