লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার খবরটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। জনসমুদ্রের মতো ভিড়, শোকস্তব্ধ পরিবেশ আর এক হৃদয়স্পর্শী নীরবতা মিলিয়ে এই জানাজাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ‘বিরল ও ঐতিহাসিক’ অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হলেও মানুষের স্রোত সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও তেজগাঁওসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এই অভূতপূর্ব জনস্রোত বিশ্বের শীর্ষ সংবাদ সংস্থাগুলোর নজর কেড়েছে।
বিবিসি (যুক্তরাজ্য): ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে সর্বস্তরের মানুষ ঢাকায় জড়ো হয়েছেন। সংবাদমাধ্যমটি আরও উল্লেখ করেছে যে, শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে বাংলাদেশে এসেছেন। ভিড়ের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে মানুষের কাতার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
আল জাজিরা (কাতার): কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে পরিচিত বেগম জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ শোকাহত মানুষ ছুটে এসেছেন। প্রতিবেদনে ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তা সদস্যের মোতায়েনের বিষয়টিও হাইলাইট করেছে তারা।
দ্য ইনডিপেনডেন্ট ও এপি: মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সংসদ ভবনের সামনের রাস্তাগুলো ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরেও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক মানুষ গ্রামাঞ্চল থেকে সারারাত ভ্রমণ করে জানাজায় যোগ দিতে এসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তারা জানায়, দাফনের সময় উপস্থিত অনেকেই উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন এবং খালেদা জিয়াকে তাঁদের ‘মা’ বলে সম্বোধন করছিলেন।
দ্য ডন (পাকিস্তান): পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ডন শিরোনাম করেছে— ‘রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন, শোকাহত বাংলাদেশ’। তারা উল্লেখ করেছে যে, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক সশরীরে উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান।
দ্য হিন্দু ও টাইমস অব ইন্ডিয়া: ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এবং টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাজায় মানুষের ঢলের প্রশংসা করার পাশাপাশি কূটনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তারা জানায়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি শোকবার্তাও হস্তান্তর করেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, খালেদা জিয়ার জানাজায় এই বিশাল উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তিনি দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে কতটা জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন। গত ৩০ ডিসেম্বর ভোরে ৮০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে বিশ্ব গণমাধ্যম।