তহবিল সংকট

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেক কমিয়ে দেবে জাতিসংঘ 

বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাধ্য হবে জাতিসংঘ। বুধবার (৫ মার্চ) জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক চিঠিতে ‘গভীর তহবিল সংকটের’ কথা উল্লেখ করে আগামী মাস থেকে এ পরিকল্পনা কার্যকরের কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দুঃখজনকভাবে, আমরা এখনও পর্যাপ্ত তহবিল পাইনি এবং কেবল ব্যয় সংকোচন ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। ফলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গারা মাথাপিছু সাড়ে ১২ ডলারের পরিবর্তে ৬ ডলার পাবে খাবারের বরাদ্দ (রেশন) হিসেবে।

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির তদারকি প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খাদ্য সহায়তা কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তহবিলের ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জন্য রেশন কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করছে; কিন্তু তারা দাতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

ডব্লিউএফপির এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রমজান উপলক্ষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারে সহিংস নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশটি থেকে পালিয়ে আসে। তারা কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে বসবাস করে, যেখানে তাদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ সীমিত।

ক্রমাগত সহায়তা হ্রাসের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মারাত্মক দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছে। এছাড়া তারা ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল এবং চরম অপুষ্টির শিকার।

বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, কারণ মিয়ানমারে তাদের ব্যাপক প্রত্যাবাসন বা অন্য কোথাও পুনর্বাসনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান লুইন বলেন, খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শামিল। কারণ তারা ইতোমধ্যে চরম দুর্দশায় ভুগছে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ডব্লিউএফপির উচিত প্রশাসনিক খরচ ও অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে শরণার্থীদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো।

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল বাতিলের নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। কারণ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ডব্লিউএফপির অর্থসহায়তার প্রায় ৮০ শতাংশের জোগান আসতো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। তবে গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে ডব্লিউএফপি তহবিল সংকটে পড়েছে।

অথচ ২০২৪ সালে রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মিজানুর রহমান। এই পরিমাণ মোট তহবিলের ৫০ শতাংশের বেশি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেছেন, দাতা সহায়তা কমে গেলে হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা ৮ ডলারে নামিয়ে আনার পর শরণার্থী শিবিরে ক্ষুধা ও অপুষ্টির মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।