নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে। ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নেপালে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতা সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন শুরু করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কয়েকটি অঞ্চলে কারফিউ জারি করে দেশটির সরকার। সোমবার সকালের দিকে দেশটির হাজার হাজার ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন দুইশতাধিক বিক্ষোভকারী। খবর হিমালয়ান টাইমস।
সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন হিমালয় কন্যা খ্যাত দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন জেলায় কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণ এক বিক্ষোভকারী অন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেতর থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জনতার আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ইতোমধ্যে জয়ী হয়েছি।’
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দুর্নীতি দমনের দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাবাহিনীর ছোড়া টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামানে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস বলেছে, প্রতিবেদন অনুসারে, কাঠমান্ডু উপত্যকায় ১৬ জন এবং ইটাহারিতে দুজন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলি নিম্নরূপ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে- ট্রমা সেন্টারে ৭ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে ১ জন।
নেপালের ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক ডা. দীপেন্দ্র পাণ্ডে বলেছেন, হাসপাতালটিতে সাতজন বিক্ষোভকারীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা আরও ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের প্রত্যেকের মাথা ও বুকে গুলির আঘাত রয়েছে। সেখানে আরও ২০ জনেরও বেশি চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বানেশ্বরের এভারেস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তা অনিল অধিকারী নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে অন্তত ৫০ জন বিক্ষোভকারী আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।
কাঠমান্ডুর সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত দুই বিক্ষোভকারী মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি। এছাড়া কেএমসি হাসপাতাল এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে একজন করে বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যেসব অঞ্চলে কারফিউ
কাঠমান্ডু উপত্যকা: ফেডারেল পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের হামলার পর নিউ বানেশ্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ।
পোখরা (কাস্কি): মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর শহীদ চক এবং সংলগ্ন এলাকায় দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ।
ইটাহারি (সুনসারি): সহিংস সংঘর্ষের পর বিকেল ৩:৩০ টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি।
বুটওয়াল-ভৈরহাওয়া (রূপানদেহি): সোমবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ।
জেনারেল জেডের বিক্ষোভ কাঠমান্ডুর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, বিরাটনগর, চিতওয়ান, ঝাপা এবং রূপানদেহিতে বিশাল বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে অনেকগুলো সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।
সূত্র: হিমালয়ান টাইমস, এএফপি, কাঠমান্ডু পোস্ট