মিসরের জাদুঘর থেকে উধাও ফেরাউনের ব্রেসলেট

মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি জাদুঘর থেকে ফেরাউন আমেনেমোপের মালিকানাধীন প্রায় তিন হাজার বছর পুরোনো একটি স্বর্ণের ব্রেসলেট রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে। ল্যাপিস লাজুলি পাথরে সজ্জিত এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটিকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল জাদুঘরের পুনর্নবীকরণ ল্যাবরেটরিতে।

মিসরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্রেসলেট হারানোর ঘটনাটি ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জন অভিযোগ দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। দেশের সব বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে ব্রেসলেটটির ছবি সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে পাচার প্রতিরোধ করা যায়।

মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, সোনার এই ব্রেসলেটটি নীলাভ ল্যাপিস লাজুলি পাথরের মণি দিয়ে অলংকৃত ছিল। এটি ফেরাউন আমেনেমোপের অন্তর্গত, যিনি মিসরের ২১তম রাজবংশের শাসক ছিলেন। প্রাচীন মিসরে ল্যাপিস লাজুলি দেবতাদের পাথর হিসেবে গণ্য হতো এবং এর রোগ নিরাময়ের গুণ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হতো।

ফেরাউনের স্বর্ণের ব্রেসলেট

ব্রেসলেটটি আগামী মাসে ইতালির রোমে অনুষ্ঠিতব্য ‘ট্রেজারস অব দ্য ফেরাওস’ প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিখোঁজ ব্রেসলেট নয়, বরং প্রদর্শনীর অন্য নিদর্শনের- এমন দাবি করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। বিভ্রান্তি এড়াতে ঘটনাটি প্রথমদিকে গোপন রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়।

ফরাসি মিশরবিদ পিয়ের মন্তে ও জর্জ গোইওন ১৯৪০ সালে ফেরাউন আমেনেমোপের সমাধি আবিষ্কার করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার সমাধি প্রাচীন মিসরের কয়েকটি অক্ষত রাজকীয় সমাধির অন্যতম।

ফরেনসিক প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস্টোস সিরোজিয়ানিসের মতে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে অবৈধ প্রত্নসম্পদ ব্যবসা দায়ী। তার আশঙ্কা, ব্রেসলেটটি হয় পাচার হয়ে ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে যাবে, নয়তো গলিয়ে ফেলা হবে। আবার সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে এটি জাদুঘরের আশপাশ থেকেও উদ্ধার হতে পারে।

ফেরাউন

এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পুনর্নবীকরণ ল্যাবরেটরিতে থাকা সব নিদর্শনের তালিকা তৈরি ও যাচাই শুরু করেছে মিসরের প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়।

ইতিহাসবিদরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, মিসরে এর আগেও বহু মূল্যবান প্রত্নসম্পদ ও শিল্পকর্ম চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যান গঘের বিখ্যাত ‘Poppy Flowers’ চিত্রকর্মটি ১৯৭৭ সালে কায়রোর মোহাম্মদ মাহমুদ খালিল জাদুঘর থেকে চুরি হয়। উদ্ধার হলেও ২০১০ সালে এটি ফের চুরি হয় এবং আজও নিখোঁজ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা জরুরি।