বিশ্ববাজারে বাড়লো তেলের দাম

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) একলাফে প্রায় ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়ার দুটি প্রধান জ্বালানি কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার জেরে সরবরাহ সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকেই এই উল্লম্ফন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

বুধবার (২২ অক্টোবর) রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েল-এর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রাশিয়া গড়িমসি করছে এমন অভিযোগের পরেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এর পরদিন বৃহস্পতিবার জিএমটি সময় ভোর ৩টা ৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিট) প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১ দশমিক ৫৬ ডলার বা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪ দশমিক ১৫ ডলার হয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৫৩ ডলার বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে ৬০ দশমিক ০৩ ডলারে পৌঁছায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এতে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এতদিন রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপে অনাগ্রহী ছিলেন। তবে এবার তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটা করার সময় হয়েছে।’

এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যও রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

ফিলিপ নোভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সাচদেবা বলেন, ‘রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য স্পষ্টভাবে ক্রেমলিনের যুদ্ধের অর্থ জোগান বন্ধ করা। এতে বাস্তবে তেলের সরবরাহ সংকুচিত হবে এবং ক্রেতারা বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য হবে।’

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমায়, তাহলে এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দিকে ঝুঁকবে, যা আটলান্টিক বাজারে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগারগুলো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা রোসনেফট ও লুকঅয়েল থেকে সরাসরি সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

অন্যদিকে, জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্টাড এনার্জির পরিচালক ক্লদিও গালিমবারতি বলেন, ‘নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উত্তেজনা বাড়াবে, তবে এই মূল্যবৃদ্ধি মূলত বাজারের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এটি কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন নয়।’

তিনি যোগ করেন, ‘গত সাড়ে তিন বছরে রাশিয়ার ওপর আরোপিত বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞাই দেশটির তেল উৎপাদন বা আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভারত ও চীন এখনো রাশিয়া থেকে তেল কিনছে।’

গালিমবারতির ভাষায়, ‘স্বল্প মেয়াদে তেলের দাম বাড়লেও বাজারের দিক নির্ধারণ করবে ওপেকপ্লাসের উৎপাদন নীতি এবং ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস শেষে তেলের বাজারে নজর রাখার মতো তিনটি বিষয় হলো- ওপেকপ্লাসের উৎপাদন শিথিলকরণ সিদ্ধান্ত, চীনের তেল মজুত বৃদ্ধি, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি।