কার্গো বিমান তৈরি করে চমক দেখাল ইরান

বিশ্বের ২০টির কম দেশ নিজস্ব নকশায় বিমান তৈরি করতে পারে। সেখানের একটি হয়ে আরেকবার চমক দিয়েছে ইরান। দেশটি সফলভাবে ‘সিমোর্গ’ নামের কার্গো বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করেছে। বিমানটি পণ্য, সেনা ও যাত্রী পরিবহনেও কাজে লাগাতে চায় ইরান। 

দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (সিএএ) প্রধান হোসেইন পুরফারজানেহ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জানান, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিমান ‘সিমোর্গ’-এর পরীক্ষামূলক সফল উড্ডয়ন হয়েছে। বিমানটিকে ইরানের বিমান বহরে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত অনুমতি পেতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ১০০ ঘণ্টা পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করতে হবে।

প্রেস টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএএর প্রধান হোসেইন পুরফারজানেহ মঙ্গলবার বলেন, সিমোর্গের দেশীয়করণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে এবং এর মাধ্যমে ইরান বিমান নকশা ও তৈরির সক্ষমতা সম্পন্ন বিশ্বের ২০টিরও কম দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ফার্সি পুরাণ ও সাহিত্যে বর্ণিত একটি কিংবদন্তি পাখির নামে নামকরণ করা সিমোর্গ বিমানটিতে আড়াই হাজার হর্সপাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন রয়েছে, যা ৬ মেট্রিকটন কার্গো তিন হাজার ৯০০ কিলোমিটার দূরত্বে বহন করতে সক্ষম। এর সর্বোচ্চ উড্ডয়ন ওজন হলো ২১.৫ মেট্রিকটন।

২০২২ সালের মে মাসে বিমানটি একটি দ্রুত-ট্যাক্সি পরীক্ষা সম্পন্ন করে, যা তার প্রথম উড্ডয়নের এক বছর আগে হয়েছিল। এরপর থেকে সিমোর্গ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিমানটির জন্য সিএএ থেকে একটি পরীক্ষার প্রশংসাপত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বিমানের উড্ডয়নযোগ্যতা নির্দেশক ‘টাইপ সার্টিফিকেট’ প্রাপ্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিমোর্গ হলো—ইরান-১৪০-এর একটি সংশোধিত সংস্করণ, যা মূলত অ্যান্টোনভ এএন-১৪০-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি ইরান-ইউক্রেন যৌথ প্রকল্প ছিল। তবে সাবেক সিএএ কর্মকর্তারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বিতর্কিত করে বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিমান। কারণ এতে একটি সংশোধিত ইঞ্জিন এবং ফিউসেলেজ ব্যবহার করা হয়েছে। সিমোর্গকে একটি চটপটে, হালকা ও দ্রুতগতির বিমান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার উচ্চ কার্গো বহন ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি ইরানের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। এই বৈশিষ্ট্যগুলো এটিকে মেডিকেল ফ্লাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর জন্য উপযুক্ত পছন্দ হিসেবে তৈরি করেছে। 

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিমানটি ইরানের স্থল ও নৌবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন ঘাঁটির মধ্যে সেনা বা সরঞ্জাম পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তারা আরও বিশ্বাস করে, সিমোর্গ ভবিষ্যতে ইরানের স্বল্প-দূরত্বের যাত্রী বিমানের বহরেও যোগ দিতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রতিবেদনগুলোতে ইরানের বিমান উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ শিল্পে বড় সাফল্যের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পটভূমিতে এই অগ্রগতি এসেছে, কারণ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির এয়ারলাইনসগুলো নতুন বিমান বা বিমানের যন্ত্রাংশ কিনতে পারে না।

সিএএ জানিয়েছে, বিমানটিকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ১০০ ঘণ্টা পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন করতে হবে। যাতে এটি ইরানের বিমানবহরে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত অনুমতি পায়। বিমানটি প্রথম দ্রুত ট্যাক্সি টেস্ট সম্পন্ন করে মে ২০২২ সালে। এবার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।