ভারতের প্রভাবশালী বাঙালি সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বন্দে মাতরম কবিতাটি লেখেন। পরে কবিতাটি ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে মুক্তিকামীদের স্লোগানে পরিণত হয়। ছয় স্তবকের সেই গীতিকবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় তার ১৮৮২ সালের উপন্যাস আনন্দমঠে।
আজ সেটিই নতুন করে রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে ‘সম্প্রদায়তান্ত্রিক তোষণের’ কারণে কবিতার কিছু অংশ বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ সংস্করণকে জাতীয় পরিচয়ের গান হিসেবে গ্রহণ করে ‘দেশকে অসম্মান’ করেছে। সে সময় যে অংশগুলো বাদ দেয়া হয়েছিল সেখানে তিন হিন্দু দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর উল্লেখ ছিল।
কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, যারা আজ নিজেদের জাতীয়তাবাদের রক্ষক দাবি করছে -বিজেপি ও তাদের আদর্শিক সংগঠন আরএসএস- তারাই বরাবরই ‘বন্দে মাতরম’ এড়িয়ে চলে। দলীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আজ যারা জাতীয়তাবাদের মুখোশ পরে ঘোরে, তারাই আসলে কখনো বন্দে মাতরম গাননি।’
রচনার ১৫০ বছর পর হঠাৎ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি বঙ্কিমচন্দ্রের এই গান নিয়ে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়ল কেন? স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রায় এক যুগ আগে থেকে যে গান জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পাবে কি পাবে না, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়। যে গানের অন্যতম প্রতিযোগী ছিল জনগণমন অধিনায়ক, তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। আসলে বিজেপির রাজনৈতিক পাশার ঘুঁটি হিসেবে স্থান পেয়েছেন গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কারণ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের। যারা একেশ্বরবাদী ও মূর্তিপূজার বিরোধী।
দ্বিতীয়ত, বিজেপির মাথার ভিতরে আপাতত বিধানসভা ভোটের পোকা ঘুরছে। বিহারে দ্বিতীয় দফার ভোট ১১ নভেম্বর। পরের বছর রয়েছে তামিলনাড়ু, বাংলা, কেরলের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোট। যার মধ্যে বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের বাঙালি ভোটাররাও আছেন। সে কারণে বন্দে মাতরমের আঁতুড়ঘর পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে এই মন্ত্র নয়, সম্পূর্ণ এই গানকে পৌঁছে দিয়ে দেশাত্মবোধকে হিন্দুত্বের সুতোয় গাঁথতে ময়দানে নেমে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী। কারণ, পশ্চিমবঙ্গকে ২০২৬ সালে ছিপে গাঁথতে পারলেই মানচিত্রের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকটা গেরুয়া হয়ে যাবে।
অতএব, বিজেপির মূল এজেন্ডাই হলো এমন এক ভারত সৃষ্টির, যার খুড়োর কল দেখিয়ে তারা ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে। বঙ্কিমের বন্দে মাতরম মূলত বাংলাদেশকে (অবিভক্ত) নিয়ে লেখা। বিজেপি নেতৃত্ব তাই পশ্চিমবঙ্গের ভোটের আগে সেই বাংলা গড়ে তোলার আফিমে বুঁদ করতে চাইছে বাঙালিকে। সূত্র : দ্য ওয়াল