‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে ঐতিহাসিক এ সমুদ্রযাত্রায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে ক্ষুধাপীড়িত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে ৪৪টি দেশের ৫০০ মানবাধিকারকর্মী ৪৫টি জাহাজে করে গাজার দিকে রওনা দিয়েছিলেন।
এক এক করে সবগুলো জাহাজ আটক করা হচ্ছিলো মাঝপথেই। সর্বশেষ ‘দ্য ম্যারিনেট’ ইয়টটিও আটক করে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জাহাজটি আটকের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র সমান্তরালে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ নামক একটি অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি।
‘আমরা জয়ী হব, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ জানিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, জাহাজে ৯৬ জন মানুষ আছেন। এর মধ্যে ৮২ জন গণমাধ্যম ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এ ছাড়া আয়োজক, ফ্লোটিলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ও জাহাজের ক্রুরা আছেন।
ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আজ ৩ অক্টোবর ২০২৫। দেখতেই পাচ্ছেন, ঝকঝকা রোদ। আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তারা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন। আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে, ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে।’
আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহূর্তে এই ৯টি যানবাহন মুক্ত আছে। আমরা আজ ফিলিস্তিনি টাইম জোনে এসেছি। এখনো দূরত্ব আছে। তবে আজ আমরা এই ৮টি ছোট নৌকাকে পার হয়ে যাব। এরপর থেকে আমাদের এই জাহাজটিই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে।’
গত রাতেই মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএএফ) ১৪ জন চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখব, ফ্রান্স সেটার ক্ষেত্রে কী করে। এ পর্যন্ত তারা তেমন কিছুই করেনি, মিষ্টি কথা বলা ছাড়া। এখন কথার সময় পেরিয়ে গেছে। এখন লড়াইয়ের সময়, এখন কাজ করার সময়। আমরা সেটাই করছি নাগরিক হিসেবে।’
আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারে গাজা পর্যন্ত যাব এবং কোনো বাধাই গ্রহণ করব না উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই নৌকাতে অনেক সাংবাদিক আছেন, চিকিৎসক আছেন। সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দেওয়ার অজুহাতে যাচ্ছি তা না। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি, ফিলিস্তিনে আমাদের থাকার-যাওয়ার অধিকার আছে। ইসরায়েল যত মানুষ খুন করেছে এবং যত সাংবাদিক ও যত চিকিৎসক খুন করেছে, সেটার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’
সহমর্মীতা প্রকাশ করে বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘যেহেতু এই দেশগুলোর নেতা-নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সেক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটাই আমরা করতে চাইব। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’
ত্রাণ নয়, অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা বলা প্রয়োজন, সুমুদ ফ্লোটিলায় যে নৌকাগুলো ছিল, তাদের কিন্তু দায়িত্ব ছিল ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার। আমরা কিন্তু ত্রাণের জন্য যাচ্ছি না। আমরা একটা অবৈধ অবরোধকে ভাঙব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে ঐতিহাসিক এ সমুদ্রযাত্রা নিয়ে বেশ সরব হয়ে উঠেছেন নেটিজেনরা। গণহত্যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে চললেও এতে কোনো কর্ণপাত করছেন না নির্লজ্জ নেতানিহাহু। প্রতিদিনই তার এই আগ্রাসনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।