পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য: খামেনি

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

সোমবার (২০ অক্টোবর) তেহরানে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডগুলোতে পদকজয়ীদেয়র সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন খামেনি।

কোন দেশের পারমাণবিক ক্ষমতা থাকা উচিত বা উচিত নয় তা নির্ধারণ করার মতো অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র নেই উল্লেখ করে আলী খামেনি বলেন, ‘আপনারা অন্য দেশের পারমাণবিক শিল্প নিয়ে হস্তক্ষেপ করার কে? কোন দেশের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সেটা বলার আপনারা কে? ইরানের পরমাণু সক্ষমতা বা শিল্প আছে কি নেই তার সঙ্গে আপনাদের কী সম্পর্ক?’

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ১৪টি বোমা ফেলেছি, যা নিশ্চিত করেছে যে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করেছি।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জবাবে খামেনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলে গিয়ে একগাদা ফাঁকা বুলি আর হাস্যকর আচরণের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত দখলদার জায়নিস্টদের আশাবাদী করতে চেয়েছেন। আমার বিশ্লেষণ হলো- এই সফরের উদ্দেশ্যই ছিল তাদের মনোবল ফিরিয়ে দেওয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গর্ব করে বলেছেন, তারা ইরানের পারমাণবিক শিল্প বোমা মেরে ধ্বংস করেছেন। খুব ভালো, স্বপ্ন দেখতেই থাকুন!’

১২ দিনের যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত পরাজয় ইসরায়েলিরা হতাশ হয়ে পড়েছিল খামেনি আরও বলেন, ‘ইহুদিবাদীরা কখনও কল্পনাও করেনি যে তরুণ ইরানিদের হাতে তৈরি একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের কৌশলগত কেন্দ্রগুলোকে ছাই করে দিতে পারে, কিন্তু তা ঘটেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমাদের, আমাদের তরুণদের দ্বারা তৈরি, কারও কাছ থেকে ধার করা বা কেনা হয়নি। এগুলো এখনো প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রয়োজনে আবার ব্যবহার করা হবে।’

গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধে অপরাধের প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখলদার ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে, যাতে তা গাজার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। তারা এই অপরাধের অংশীদার।

খামেনি প্রশ্ন রাখেন- ট্রাম্প দাবি করছেন, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। গাজায় তাদের হামলায় ২০ হাজারের বেশি শিশু ও নবজাতক শহীদ হয়েছে- ওরা কি সন্ত্রাসী ছিল? চার-পাঁচ বছরের শিশু, নবজাতক- এরকম বিশ হাজার শিশুকে তোমরা হত্যা করেছ! এরা কি সন্ত্রাসী ছিল? না, তোমরাই সন্ত্রাসী!

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের আসল নিদর্শন হলো যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন তিনি ইরানিদের বন্ধু। মিথ্যা কথা! আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাগুলো কাদের বিরুদ্ধে? ইরানের জনগণের বিরুদ্ধেই তো! আপনারা ইরানের শত্রু, বন্ধু নন।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতি ইঙ্গিত করে খামেনি বলেন, ‘আপনার যদি সত্যিই ক্ষমতা থাকে তাহলে অপপ্রচার এবং অন্য দেশের কাজে হস্তক্ষেপ ও অন্য দেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মতো কাজ বাদ দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে শান্ত করুন এবং তাদেরকে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠান।’ সূত্র: ইরান ইন্টারন্যাশনাল, রয়টার্স