মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে ১ কোটি মুসলিম

যুক্তরাজ্যের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের কারণে দেশটির প্রায় ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। যাদের সিংহভাগই মুসলিম এবং বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। সম্প্রতি নাগরিক অধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘রানিমিড ট্রাস্ট’ এবং আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা ‘রিপ্রিভ’-এর এক প্রতিবেদনে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে থাকা ‘চরম ও গোপনীয়’ ক্ষমতার বলে সরকার চাইলে যেকোনো সময় নির্দিষ্ট নাগরিকদের ব্রিটিশ পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, সরকার যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য (বংশসূত্রে বা অন্য কারণে), তবে সেই ব্যক্তি নিজেকে ওই দেশের নাগরিক মনে না করলেও বা সেখানে কখনোই না গেলেও তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই আইনের ফলে পাকিস্তান (৬ লাখ ৭৯ হাজার), ভারত (৯ লাখ ৮৪ হাজার) এবং বাংলাদেশসহ (ঝুঁকিতে থাকা ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশের অংশ) দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। এছাড়াও সোমালিয়া, নাইজেরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূতরাও এই তালিকার শীর্ষে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এই ব্যবস্থা ব্রিটেনে নাগরিকত্বের একটি ‘জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস’ তৈরি করেছে। যেখানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের নাগরিকত্ব নিরাপদ ও শর্তহীন হলেও, অ-শ্বেতাঙ্গ ও মুসলিমদের নাগরিকত্ব শর্তসাপেক্ষ।

রানিমিড ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী শাবনা বেগম বলেন, ‘নাগরিকত্ব একটি অধিকার, কোনো বিশেষ সুবিধা নয়। অথচ সরকার একটি দ্বিস্তর নাগরিকত্ব ব্যবস্থা চালু রেখেছে। পরিবার যত প্রজন্ম ধরেই এ দেশে থাকুক না কেন, ভালো বা মন্দ আচরণের অজুহাতে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যা বিপজ্জনক।’

রিপ্রিভের পরিচালক মায়া ফোয়া বলেন, ‘বিগত সরকার রাজনৈতিক ফায়দার জন্য এই ক্ষমতা ব্যবহার করেছে এবং বর্তমান সরকার সেই চরম ও গোপনীয় ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে চলেছে। একজন মন্ত্রীর কলমের খোঁচায় ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা একটি কর্তৃত্ববাদী আচরণের ইঙ্গিত দেয়।’

এ বিষয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।