বিশ্বের শীর্ষ মেধাবীদের যুক্তরাজ্যে আকৃষ্ট করতে ভিসা ফি সম্পূর্ণ মওকুফের প্রস্তাব বিবেচনা করছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রশাসন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর অংশ হিসেবে ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্স’ এ প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অথবা আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারপ্রাপ্ত মেধাবীদের জন্য সম্পূর্ণ ভিসা ফি মওকুফের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ট্রেজারির মধ্যে এই প্রণোদনা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা এমন ব্যক্তিদের কথা বলছি, যারা শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন কিংবা নোবেল, ফিল্ডস পদক বা টিউরিং অ্যাওয়ার্ডের মতো স্বীকৃত পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের জন্য খরচ শূন্যে নামিয়ে আনার ধারণা বিবেচনায় রয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা পেতে একজন আবেদনকারীকে ৭৬৬ পাউন্ড ফি দিতে হয়। একই পরিমাণ ফি প্রযোজ্য হয় তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও। তাছাড়া, প্রতি ব্যক্তির জন্য বার্ষিক ১ হাজার ৩৫ পাউন্ড স্বাস্থ্য সারচার্জও রয়েছে। ২০২০ সালে চালু হওয়া এই ভিসা ব্যবস্থার আওতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবিক বিদ্যা, চিকিৎসা এবং শিল্প-সংস্কৃতিতে খ্যাতিমান ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্স’ বর্তমানে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের আকৃষ্ট করতে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করছে। এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ব্যবসায় উপদেষ্টা বরুণ চন্দ্র এবং বিজ্ঞানমন্ত্রী লর্ড প্যাট্রিক ভ্যালান্স।
এদিকে, এমন সময়ে এই প্রণোদনা প্রস্তাব আসছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি দেশটির প্রযুক্তি খাতে বহুল ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসার জন্য নতুন আবেদনকারীদের ফি ১ লাখ ডলারে উন্নীত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন কঠোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের টাস্কফোর্সকে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আগামী নভেম্বরে বাজেট ঘোষণার আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে মেধাবী অভিবাসীদের জন্য উদার নীতিই হতে পারে ব্রিটেনের জবাব।
যদিও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (হোম অফিস) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব অনুমোদন করেনি, তবে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিসা নীতিমালা পর্যালোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, এই উদ্যোগ সরকারের অভিবাসন কমানোর লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে না। বরং এটি বিশ্বের সেরা প্রতিভাবান মানুষদের যুক্তরাজ্যে আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের সকল দপ্তর ও নেতৃত্ব একমত।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ভিসা ফি সম্পূর্ণ মওকুফের এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি যুক্তরাজ্যের জন্য বৈশ্বিক প্রতিভা টানার প্রতিযোগিতায় বড় একটি সুবিধা এনে দেবে।