ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ ফ্লোটিলার যাত্রীদের

ইসরায়েলি সেনাদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীরা ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, আটক থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন। 

অধিকারকর্মীরা বলেন, তাদের হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তিন দিন তারা কিছু খেতে পাননি। এমনকি শৌচাগারের পানি পান করে থেকেছেন।

গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা মানুষেরা গাজার ওপর আরোপিত নৌ–অবরোধ ভাঙতে চেয়েছিলেন। তারা অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতীকী পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী সে নৌযানগুলোকে আটকে দেয় এবং অধিকারকর্মীদের আটক করে। গত বুধ থেকে শুক্রবারের মধ্যে ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ইতালীয় সংবাদ সংস্থা এএনএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল রোববার ইতালির রোমে ফিরে অধিকারকর্মী চেজারে তোফানি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভয়ংকর ব্যবহার করা হয়েছে…সেনাদের হেফাজতে থাকার পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।’

ইতালির স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির ইসলামিক কমিউনিটিজ ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াসিন লাফরাম জানান, তিনি অধিকারকর্মীদের সঙ্গে মিলানে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছে। তারা আমাদের ওপর অস্ত্র তাক করে ছিল। নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ বলে যে রাষ্ট্র দাবি করে, সেখানে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি গত শনিবার রাতে ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনারা আটক অধিকারকর্মীদের ওষুধ দেননি এবং তাদের সঙ্গে ‘বানরের মতো আচরণ’ করেছেন।

সাভেরিও তোমাসি আরও বলেন, প্রহরীরা আটক অধিকারকর্মীদের নিয়ে বিদ্রূপ করছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন। এই অধিকারকর্মীদের মধ্যে ছিলেন জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা ও কয়েকজন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা।

মালয়েশিয়ার অভিনেত্রী ও গায়িকা দুই বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি বলেন, ইসরায়েলি সেনারা তাদের সঙ্গে ‘বর্বর’ ও ‘নিষ্ঠুর’ আচরণ করেছেন।

শনিবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছে হাজওয়ানি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেন, ‘কল্পনা করতে পারেন, আমরা শৌচাগার থেকে পানি খেতে বাধ্য হয়েছি? কেউ কেউ খুব অসুস্থ ছিল, কিন্তু তারা (ইসরায়েলি) বলেছিল, “তারা মরে গেছে নাকি? যদি না মরে থাকে, তবে তা আমার দেখার বিষয় নয়।” তারা  খুব নিষ্ঠুর মানুষ।’

এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নিয়ে সাংঘর্ষিক বক্তব্য এসেছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, খারাপ আচরণের অভিযোগ মিথ্যা। তাদের দাবি, বন্দীদের সব আইনি অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।

ইসরায়েলে আটক হওয়া অধিকারকর্মীদের নির্যাতন করা নিয়ে পাকিস্তান, তুরস্ক, কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশ সমালোচনা করেছে। বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। গ্রিস লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল আরও ২৯ জন ফ্লোটিলা কর্মীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অনেকেই এখনো ইসরায়েলে আটক আছেন।