পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছেন দেশটিকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ইমরান খান। তার দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদে চমক দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে জাতীয় পরিষদের ১০১ আসনে জিতে সেঞ্চুরিও করেছে ইমরানের দল পিটিআই।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সর্বশেষ ফল অনুযায়ী ২৫৬টি আসনের মধ্যে ১০১টিতে জয় পেয়েছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোট হলেও রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ৭টি আসনের ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে এই আসনগুলোতেও পিটিআইয়ের নেতারা জয় পাবেন। জেলবন্দি ইমরান ও পিটিআই’র জনপ্রিয়তা এখানে দৃশ্যমান।
পিটিআই থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন। তারা এখন পর্যন্ত ৭৩টি আসন পেয়েছে। আর ৫৪টি আসন পেয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি আছে তৃতীয় স্থানে। অন্যান্য দল পেয়েছে ২৯টি আসন।
তবে পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে হলে কোনো দলকে জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে অন্তত ১৩৩টি আসন পেতে হবে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, কোনো দলই পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা ১৩৩টা আসন পাচ্ছে না। ফলে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টই পেতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
এক্ষেত্রে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, তারাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জয় পেয়েছেন। ঝুলে থাকা সাত আসনের ফল ঘোষণা করা হলে তাদের পাল্লা আরও ভারী হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইমরানের দলের নেতাদেরই সরকার গঠনের জোরালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
তবে ইমরানকে পাশ কাটিয়ে সরকার গঠনে মরিয়া নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন ও বিলওয়াল ভুট্টোর পিপিপি। কিন্তু দল দুটির আসন যোগ করেও প্রয়োজনীয় ১৩৩ আসনের হিসাব মিলছে না। এই পরিমাণ আসন নিশ্চিত করতে হলে জোট সরকারে আরও দল টানতে হবে তাদের। তা ছাড়া তাদের সম্ভাব্য ঝুলন্ত পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রীকে হবেন তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।
পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেরা মিলে কোনো সরকার গঠন করতে পারেন না। জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত ৭০ আসনে কোনো ভাগও পান না তারা। সরকারে থাকতে হলেও তাদের কোনো দলে যোগ দিতে হয়। এ জন্য নির্বাচনে জয়ের পর ৭২ ঘণ্টা সময় পাবেন তারা। ইমরানের উপদেষ্টা জুলফি বুখারি বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার দলের পক্ষ থেকে একটি মঞ্চ ঘোষণা করা হবে। তারপর সেই মঞ্চে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে যোগ দিতে বলা হবে।
সব মিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে পাকিস্তানের পরিস্থিতি ঘন অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে আবার সেনা শাসন চলে আসে কি-না, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনে তাগিদ দিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান আসিম মুনির।