লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বাঘ প্রবেশের গুজব ছড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও লোকমুখে বাঘ প্রবেশের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তে আতঙ্ক ছড়ায়। তবে বিজিবির হ্যান্ড মাইকে সতর্ক থাকার ঘোষণায় আতঙ্ক বাড়ছে বলে অভিযোগ সীমান্তবাসীর।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের নাজিরগোমানী ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বাঘের উপস্থিতি পেয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলেন। পরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার জনগণকে বিজিবি হ্যান্ড মাইকে সতর্ক থাকার ঘোষণা দেন।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা থানার বালারহাট এলাকা এবং বাংলাদেশের পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ও জোংড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকা বেশ কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। ওই এলাকার বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৮ নম্বরের ৩ নম্বর উপপিলার সংলগ্ন ভারতের অভ্যন্তরে বাঘের উপস্থিতি ও পায়ের চিহ্ন দেখতে পায় স্থানীয়রা। আর কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় বাঘ প্রবেশে বিষয়ে মানুষের মনে সন্দেহ জাগে।
ওইদিন রাতে ভারতের বালারহাট এলাকার পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল থেকে একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে ঘটনাটি সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে। হঠাৎ বাঘ লোকালয়ে চলে আসায় ভারতীয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়রা হইচই ও চিৎকার শুরু করলে বাঘটি লোকালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর ওই চিৎকার বাংলাদেশ থেকেও শোনা যায়।
এই ঘটনা ভারতের ১৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রীমুখ ক্যাম্পের টহল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) নাজিরগোমানী ক্যাম্প জানতে পারে। বিষয়টি জানার পর রাতেই বিজিবি সীমান্ত এলাকায় হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া এবং রাতে চলাচলে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সপ্তাহ আগে ভারতের ওই গ্রামে দুটি বাঘ এসেছিল। স্থানীয় বনবিভাগের সহায়তায় একটি বাঘ আটক করা হয় এবং অপরটিকে স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে বলেও জানা যায়। এসব ঘটনার কারণে সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশি মানুষজনের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় মাত্র।
মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (৫৮) বলেন, ‘এলাকায় বাঘ নাই। খালি শুনা যায় বাঘ নাকি বের হয়েছে ভারত থেকে। বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়-স্বজন আমাদেরকে কল করে বাঘ বের হয়েছে কি না জানতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো বাঘ চোখে দেখেনি।’
একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম (৬০) বলেন, ‘শুনছি নাকি বাঘ আসছে। কিন্তু দেখি নাই। কেউ দেখেনি। ক্ষেতে কাজ করি এ কথা শুনে ভয় লাগে।’
এ বিষয়ে নাজিরগোমানী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) মোবাইল নম্বরেও একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাঘ বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো প্রমাণ নেই। কেউ বাঘ দেখেওনি। কোনোদিন বাঘ দেশে আসেনি। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমান্তবাসীদের সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।’ তবে বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সিইসির বৈঠক আজ