মাত্র ছয় মাসের রাজনৈতিক অধ্যায়, তাতেই যেন চিরচেনা সাকিব আল হাসান হারিয়ে গেলেন আলো-আঁধারির ভেতরে। একদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অলরাউন্ডারদের একজন, অন্যদিকে রাজনীতিতে পা রেখেই সমালোচনার ঝড়, মামলা আর আস্থার সংকটে পড়ে যাওয়া এক জনপ্রিয় মুখ।
২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাস। দেশজুড়ে উত্তাল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাকিব ছিলেন কানাডায়, পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণে। সেই সময়কার এক ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে, যেখানে আন্দোলনের সময় তিনি উদযাপনরত অবস্থায় ছিলেন। বিষয়টি চরম বিতর্ক ডেকে আনে তার রাজনৈতিক পরিচয়কে ঘিরে। অভ্যুত্থানের পরে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয় হত্যা মামলা, উঠে আসে দুর্নীতির অভিযোগও।
তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাকিব নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বলেন, 'রাজনীতিতে আসা আমার ভুল নয়। যেকোনো নাগরিকের মতো আমিও চাইছিলাম দেশের জন্য কিছু করতে। আমি মনে করেছিলাম, মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। দেখুন, ব্যাপারটা হলো, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যদি আমার জন্য ভুল হয়ে থাকে, তবে ভবিষ্যতে যে কেউ রাজনীতিতে যোগ দিলে সেটাও ভুলই হবে। ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী—যে কেউ রাজনীতিতে যোগ দিলেই ভুল হতে পারে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার এবং যে কেউ তা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দেবে কি দেবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমি সঠিক ছিলাম বলে মনে করি এবং আমি এখনো বিশ্বাস করি যে আমি সঠিক ছিলাম। কারণ, আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা। আমি অনুভব করেছি, আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি। আমি এটাও অনুভব করেছি যে মাগুরার মানুষ আমাকে চেয়েছিল।'
রাজনীতি কেন, এই প্রশ্নে সাকিবের যুক্তি সোজা: 'যদি সিস্টেম বদলাতে চান, তাহলে সিস্টেমের অংশ হতে হয়। বাইরে থেকে বদলানো যায় না। অনেকে বলতে পারে আমার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। কিন্তু যারা এসব বলছে, তাদের বেশির ভাগই আমার এলাকার ভোটার নয়। মাগুরার ভোটাররা ভিন্নভাবে চিন্তা করে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, যদি আজ আবার নির্বাচনে অংশ নিই, তবে মাগুরার মানুষ আমাকেই আবার ভোট দেবে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব। এটা আমার বিশ্বাস এবং আমি এ জন্যই রাজনীতিতে এসেছি।'
তবে ক্রিকেটকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন সাকিব সবসময়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শও ছিল সেই পথেই। সাকিব বলেন, “উনি বলেছিলেন, ‘তোমার রাজনীতি করতে হবে না, তুমি শুধু ক্রিকেটে মন দাও।’ আমি তাই করেছি।'
রাজনীতিতে সময় দেওয়ার সুযোগ সাকিবের হয়ইনি বললেই চলে। নির্বাচনের পর মাত্র কয়েক দিন মাগুরা গিয়েছিলেন। বাকি সময় ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেট ও দেশের বাইরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে।
সবকিছু সত্ত্বেও সাকিব আত্মবিশ্বাসী যে, আবার যদি নির্বাচন হয়, মাগুরার মানুষ তাকেই বেছে নেবে, 'যারা আমার রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের বেশিরভাগই আমার এলাকার ভোটার না। আমার বিশ্বাস, আমার এলাকাবাসী এখনো আমাকে চায়' -বলেন তিনি।
রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ছিল কি না ভুল, তা সময়ই বলবে। তবে সাকিবের ছয় মাসের এই অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে-জনগণের চোখে একজন খেলোয়াড়ের ভুলের মূল্য অনেক বড়, বিশেষ করে যখন তিনি মাঠের বাইরেও আলোচনায় থাকেন।
