ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আওয়ামী লীগের আমলে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে

আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, ০৭:৩৬ এএম

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া ৫ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব লাইসেন্সের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও দলটির সমর্থক ব্যবসায়ীদের নামে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে জমা পড়া ও জমা না পড়া অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য যাচাইয়ে এগুলোর কাগজপত্রে অসংগতি পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে। সূত্র বলেছে, সব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো ৭ হাজারের বেশি লাইসেন্সের অস্ত্র জমা পড়েনি। বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুলিশ এসব লাইসেন্সধারী বা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র পায়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের অনেকে বিদেশে চলে গেছেন।

জানতে চাইলে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ৪৯ হাজার ৬৭১টি লাইসেন্স রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে ৪৬ হাজার লাইসেন্স ব্যক্তির নামে। বাকিগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে। ব্যক্তির নামে থাকা লাইসেন্সগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে আছে অন্তত ৮ হাজার ২০০টি লাইসেন্স। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে লাইসেন্স আছে প্রায় ২ হাজার ৫০০টি। অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে আছে মাত্র ৭৯টি লাইসেন্স। বিভাগভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১৪ হাজার ৬৮৩টি। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে, ২ হাজার ১১৮টি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে থাকা লাইসেন্সগুলোর অধিকাংশ দলটি গত ১৫ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালে দেওয়া।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আগস্টেই সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের সব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্রগুলো ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা দেননি, তাঁদের লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ওই নির্দেশনার পর সারা দেশে লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস পরও এখনো ৭ হাজারের বেশি অস্ত্র জমা পড়েনি। জমা দেওয়া ও না দেওয়া—উভয় ক্ষেত্রের অস্ত্রের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ৫ হাজারের কিছু বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জমা পড়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, বেশির ভাগের কাগজপত্রে অসংগতি আছে। আবার যাঁরা জমা দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এসব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুলিশের এসবি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের সময়ে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেককে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও এই সুযোগে লাইসেন্স নিয়েছেন। কেউ কেউ এসব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন সময় বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতেও প্রদর্শন করেন। কেউ কেউ অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ বলেও দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লাইসেন্সের এসব শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে অন্যদের লাইসেন্স বাতিল হলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের লাইসেন্স বাতিল হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের একটি থানার সূত্র জানায়, ৩ সেপ্টেম্বর অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসবির মাধ্যমে থানায় থানায় অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের একটি তালিকা পাঠানো হয়। ওই তালিকায় অস্ত্রের লাইসেন্সধারীর নাম, ঠিকানা ও অস্ত্রসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ছিল। তালিকার ভিত্তিতে অস্ত্র জমা না দেওয়া লাইসেন্সধারীদের বাড়ি বাড়ি যায় পুলিশ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের পাওয়া যায়নি। অস্ত্রও পাওয়া যায়নি। প্রায় একই কথা বলেছেন ডিএমপির আরও কয়েকটি থানা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ একাধিক জেলার বিভিন্ন থানার কর্মকর্তারা।

khk
আরও পড়ুন