রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে প্রায় নয় ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ থাকা দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব মাইলস্টোনের ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পেরেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশ প্রহরায় তাদের গাড়িতে করে কলেজ থেকে বের করা হয়। পরে দিয়াবাড়ী-সংলগ্ন মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতরের রাস্তা দিয়ে উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবদের বহনকারী গাড়িগুলো বেরিয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানান। সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এজন্য উপদেষ্টারা বের হতে পারছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুই উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও প্রেস উইংয়ের সদস্যরা বেরিয়ে গেছেন।
সোমবার (২১ জুলাই) বিমান বিধ্বস্তে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যান দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এর আগে সকালে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি ঘোষণা করে আন্দোলনে নামেন।
সরকারের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি মানা হলেও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের গোলচত্বরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা গোপন করার অভিযোগ তুলে দিনভর বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা। দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বের হয়ে আসেন। তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব আবারও কলেজের ভেতরে ঢুকে যান।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সেখান থেকে পুলিশের পাহারায় বের হওয়ার চেষ্টা করে আবারও ব্যর্থ হন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব। এ সময় তাদের গাড়িবহর শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফের মাইলস্টোন কলেজে ফিরে যায়। তারা আবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং কলেজের ৭ নম্বর একাডেমিক ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন।
উপদেষ্টাদের অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দিনভর ওই ভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। অবশেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ পাহারায় তাদের গাড়িতে করে ক্যাম্পাস থেকে বের করা হয়।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজজিআই (৭০১) মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২৫ জন শিশুই। এ ছাড়া আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি রয়েছেন ১৬৫ জন।
দাবি মেনে নেওয়ার পরেও এখনো অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা
মাইলস্টোন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার