ঢাকা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় ‘বাংলাদেশের অ্যামাজন’

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

পাখির চোখে তাকালে মনে হবে—সবুজে মোড়ানো এক অরণ্যরাজি। আকাশ থেকে দেখা যায় দ্বীপ-বদ্বীপের মতো ভেসে থাকা বন, মাঝেমধ্যে আনারস-কলার বাগান, ধানের খেত আর খাল-বিল। আবার কোথাও উঁচু টিলা, কোথাও নিচু জমি—যাকে স্থানীয়রা বলেন ‘বাঈদ’। সব মিলিয়ে যেন এক অদ্ভুত মোহনীয় দৃশ্য। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের নাম মধুপুর গড়, যাকে অনেকে বলেন বাংলাদেশের অ্যামাজন।

শালবনের ইতিহাস

পরিবেশবিদদের মতে, মধুপুর গড় দেশের বৃহত্তম শালবনের একটি। প্রাচীন ভারতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শালবনেরই অংশ এটি। ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর প্রভাবে এখানে শালগাছ জন্মে ঘন অরণ্যের সৃষ্টি করেছে। শালবনকে বলা হয় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র পত্রঝরা বনাঞ্চল।

উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এই গড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। প্রস্থ ৮ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি ঢাকা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বাংলাদেশে শালবন মূলত টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় বেশি বিস্তৃত। এর মধ্যে বৃহত্তম অংশই মধুপুর গড়ে।

প্রকৃতির মোহনীয়তা

শীতকালে মধুপুরের বাঈদগুলো নতুন সবুজে সেজে ওঠে। চারপাশে ধানক্ষেত, মাঝেমধ্যে খাল-বিল, সবুজে মোড়া গ্রাম—সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নলোক।

টাঙ্গাইল থেকে বেড়াতে আসা মনিরুজ্জামান হিমেল বললেন, “মধুপুর ঘুরতে আসি প্রায়ই। প্রকৃতি অসাধারণ লাগে।”

দিনাজপুর থেকে আসা ভ্রমণপ্রেমী নাওসাদ আলী বিপ্লব বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজে ঘেরা বন সত্যিই মনোমুগ্ধকর।” সবুজে সবুজে হারিয়ে যাচ্ছে মন।

প্রকৃতির হাহাকার

যদিও উপর থেকে দেখা যায় সবুজ সমারোহ, ভেতরের বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। বন উজাড়, দখল আর নির্বিচার গাছকাটা ধ্বংস করছে এই শালবন। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে বনাঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

প্রকৃতিপ্রেমীদের আহ্বান—

দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে,
বন উজাড় বন্ধ করতে হবে,
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের অ্যামাজান

মধুপুর গড় শুধু একটি বন নয়, এটি দেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এর বিশাল সবুজ ভূমি পরিবেশের ফুসফুস হয়ে কাজ করছে। তাই মধুপুরকে টিকিয়ে রাখা মানে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা।

সবুজে ভরা এই মধুপুর গড় সত্যিই বাংলাদেশের অ্যামাজান—যা একদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য, অন্যদিকে পরিবেশের প্রাণভূমি।

NJ
আরও পড়ুন