শেখ হাসিনার পতনের পর রাজধানীর বিভিন্ন কাউন্সিলর অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। দুই মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর পলাতক রয়েছেন। ফলে কাউন্সিলর অফিসের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গত দুই মাসে সাবেক ৭ কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই হত্যা মামলার আসামি।
ডিএনসিসির সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেছেন, জন্ম–মৃত্যুনিবন্ধনসহ কাউন্সিলর কার্যালয়ে যেসব নাগরিক সেবা দেওয়া হতো, সেসব সেবার ঘাটতি মোকাবিলায় আলোচনা হয়েছে। যেসব কাউন্সিলর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবার কাজ স্বাভাবিক হবে।
একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে- রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় অফিস তালাবদ্ধ। ১ অক্টোবর দুপুরে সেখানে উপস্থিত হন কয়েকজন মশকনিধনকর্মী। তাঁদের দুজন মেহেদী হাসান ও হাবিবুর রহমান। তাঁরা জানান, কার্যালয়টি প্রায় দুই মাস ধরে তালাবদ্ধ। তাঁরা এসেছেন হাজিরা দিয়ে মশকনিধনের ওষুধ নিতে। কার্যালয়ে জন্ম–মৃত্যুনিবন্ধনসহ অন্যান্য কাজ বন্ধ রয়েছে। মশকনিধনকর্মীদের হাজিরা দেওয়ার সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন এসে তালা খুলে দেন।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরোনো (১ থেকে ৩৬ নম্বর) ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের দায়িত্ব পালন করে। বাকি ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মতো আঞ্চলিক নির্বাহী কার্যালয়ে গিয়ে এই নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু হামলার কারণে বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিবন্ধনসেবা বন্ধ হয়ে যায়। এসব কার্যালয়ে দুই মাস ধরে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রয়েছে অথবা ব্যাহত হচ্ছে।
পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. এনামুল হক আবুলকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, পল্টন থানায় এনামুল হক আবুলের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আ স ম ফেরদৌস আলমকে (৭৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২। ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ১ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর কৃষি মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোহাম্মপুর থানার সুজন হত্যা মামলায় সলু আসামি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান।
রাজধানীর খিলগাঁও নন্দীপাড়া থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ৩ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আজিজুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তাকে ডিবির মতিঝিল বিভাগ গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২২ আগস্ট লালবাগ থানার কেল্লার মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজিমপুরে কলেজছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহকে হত্যার মামলায় ২৩ আগস্ট তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুগদাপাড়া এলাকার কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগরের প্যারাগন রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পন্থায় ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে।