ঢাকা শহর এক আজব শহর। শুকনা মৌসুমে ধুলা-বালির দাপট আর বর্ষাকালে পুরো সড়কে জলাবদ্ধতা। এসময় বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের নোংরা পানি সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। নিজের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বেকায়দায় পড়তে হয় পথচারীদের।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাস্তার বিভিন্ন সড়কে জমে যাওয়া পানি নগরবাসীর সেই দুর্ভাগ্যকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলো। এদিকে গতকাল আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছিলো আগামী ৩১ মে মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের টেকনাফ উপকূলে এসে পৌঁছাতে পারে।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, জলবায়ু রীতি অনুযায়ী দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ করে মূলত টেকনাফ অঞ্চল দিয়ে। ৩১ মে টেকনাফ, ১ জুন কক্সবাজার, ২ জুন চট্টগ্রাম ও ৪ থেকে ৫ জুন দেশের মধ্যাঞ্চলে মৌসুমি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এই নিয়ম সবসময় কার্যকর হয় না। এবার আশা করছি স্বাভাবিক ভাবেই মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করবে। এটা সারাদেশে জুনের প্রথম সপ্তাহে বিস্তার লাভ করতে পারে। এ সময় দেশজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ঢাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ :
রাজধানীতে আজ সকাল থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বলছে। বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে গেছে। এমনকি বড় সড়কেও পানি আটকে আছে।
ফার্মগেটে আসার জন্য মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এস এম শুভ কলেজগেট থেকে বাসে উঠেছিলেন। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে জমে ছিলো পানি। এতে তীব্র যানজটে আটকে ছিলেন অন্তত আধা ঘণ্টা। শুধু বৃষ্টিই নয়, ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। আর ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন সকাল থেকেই। এই দুই আন্দোলন রাজধানীর যানজট পরিস্থিতিকে নাজুক করে দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিউ এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় যানজটে আটকে থাকা এক ক্যামেরা পারসন শাকিল জানান, নিউমার্কেট ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে ধানমন্ডি হকার্সসহ আশপাশের বিপনীবিতান গুলোতেও। জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতেও আটকে আছে শত শত যানবাহন।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে শাকিল জানান, যানজট ছড়িয়ে পড়েছে মগবাজার, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, এয়ারপোর্ট রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, হাতিরঝিল, মহাখালীসহ আরও অনেক এলাকায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, সকাল ৬টা থেকে এখন পর্যন্ত (দুপুর ১২টা) রাজধানীতে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে দেশের অন্যত্রও। তবে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম।
আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকায় এই সময়ে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবার আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক।
চলতি বছর স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের সীমানায় আসতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা। এবার জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আজ সকালে দেওয়া বুলেটিনে জানানো হয়, আগামী পাঁচ দিনের পর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরবর্তী পাঁচ দিনে আরও বাড়তে পারে।
বুলেটিন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে এবং আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একটি দুর্বল লঘুচাপের অক্ষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ২৬ মে নাগাদ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি এবং অস্থায়ী দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, মাদারীপুর, পাবনা, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকতে পারে।