১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে যশোরে চলছে রঙ তুলির আচড়ে চলছে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি। এসব আচড়ে ফুটে উঠছে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন অনুসঙ্গ। আর এসব অনুসঙ্গের কর্মযজ্ঞ সামলাচ্ছে যশোরের আঁকিয়েদের সংগঠন চারুপীঠ।
চারুপীঠের শিল্পীরা কেউ মুখোশ তৈরি করছেন। কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নাচ, গান, নাটকের প্রস্তুতি নিয়ে। বাঁশ আর কাগজ দিয়ে কেউ তৈরি করছেন টিয়া, প্যাঁচা, ফুল, নানা রঙের মুখোশ। গভীর মনোযোগে কেউ বা জলরঙে ছবি আঁকছেন, কেউবা নকশা করছেন কাগজে। নানা আকৃতি ও ধরনের মুখোশে দেওয়া হচ্ছে রঙ তুলির পরশ।
শহরের পৌর পার্কে শুধু চারুপীঠ নয়, এবার যশোরের ৩০টিরও বেশি সংগঠনের কার্যালয়ে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। আয়োজন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাঁচ শতাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী। উদীচী, বিবর্তন, ব্যাঞ্জন যশোর, তির্যক যশোর, পুনশ্চ, চাঁদের হাট, উৎকর্ষ, স্পন্দন, সপ্তসুর, ভৈরব যশোর, সুরধনী, সুরবিতান, নিত্যবিতানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে চলছে গান, নাচ, নাটক ও গীতিনাট্যের মহড়া। বর্ণিল উৎসব ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তৈরি করেছে ভিন্ন আঙ্গিকের আমন্ত্রণপত্রও।
বৈশাখের আয়োজন নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন জানান, করোনার কারণে ১৪২৭ ও ১৪২৮ সনে নববর্ষের উৎসব ছিল ঘরবন্দী। ১৪২৯ ও ১৪৩০ সনে সংক্রমণ কমলেও রমজান মাস হওয়ায় অনেকটা কাটছাঁট করে উৎসবে মাতে যশোরবাসী। এবার সবকিছু স্বাভাবিক থাকাই স্বাড়ম্বরে ঢাকঢোলের বাদ্যে মেতে উঠতে প্রস্তুত হচ্ছে সংগঠনগুলো।
তিনি জানান, বরাবরের মতো যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯টায় বের করা হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হবে এই শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রার নৌকা, দোয়েল, কচ্ছপ, বড় আকৃতির সাপ, কুমির, বাঘ, পুতুলসহ নানা রঙের মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত চারুশিল্পীরা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, গত কয়েক বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার কারণে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখে ভাটা পড়ে। তবে এবছর ভিন্ন আয়োজনে মাতবে যশোরবাসী। আয়োজনের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও এবছর ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা হবে। মেলায় থাকবে নাগরদোলা, লাঠি খেলা, মোরগের লড়াই, সাপ খেলা, বায়োস্কোপ, যাত্রাপালা, লোকজ সংগীত নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসবে দোকানিরা।
জেলার চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও চারুতীর্থের শিল্পীদের তুলির রঙিন আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে শোভাযাত্রার এসব অনুষঙ্গ। চারুপীঠের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, এবছর আমরা তিনশোর অধিক মুখোশ তৈরি করছি। পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করছি বৈশাখের সারাদিন নানা আয়োজনে মেতে থাকবে যশোরবাসী।
বরাবরের মতো পৌর উদ্যানে সকাল ৭টা ১ মিনিটে উদীচীর যশোর শাখার আয়োজনে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, বরাবরই উদীচীর বৈশাখী আয়োজনে নতুনত্ব থাকে। এবারও সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনের কয়েকশ সাংস্কৃতিক কর্মী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যের প্রতীক সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। আবহমানকাল ধরে বাঙালি-অধ্যুষিত জনপদে সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক এই উৎসব উদ্যাপিত হয়ে আসছে। নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও হবে বৈশাখী মেলা। এছাড়াও শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির উদ্যোগে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পহেলা বৈশাখকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবীর। তিনি বলেন, বৈশাখী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।